‘ আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই...’। বহুলপরিচিত এ ছড়াটি গ্রীষ্মকালে গ্রামে একটু অন্যভাবে শুনলে অবাক হওয়ার কথা নয়। ‘আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা বঁইচি (কাঁটাবহরী) তলায় যাই, বঁইচি মালা গলায় দিয়ে মুখে তুলে খাই।’ শহুরে জীবনে অপরিচিত হলেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি জনপ্রিয় ফল কাঁটাবহরী বা বঁইচি। ছোট গোলাকার ফলের মালা গেঁথে ছোট ছেলেমেয়েরা তা মজা করে খায়।
গ্রামেগঞ্জে সাধারণত খেতের পাশে ঝোপঝাড়ে বঁইচি বেশি জন্মায়। অনেক সময় পাহাড়ের ঢালেও জন্মে। গাছ ঝোপালো এবং গাছের শাখা কাঁটাযুক্ত। এ কারণে বঁইচি কাঁটাবহরী নামেও পরিচিত। বর্তমানে বন উজাড় হওয়ায় গাছটি বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায়।
সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বঁইচিগাছে ফুল ধরে। পাঁচ পাপড়িযুক্ত ক্ষুদ্রাকৃতির ফুল। জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে ফল পাকতে শুরু করে। কাঁচা ফল গোলাকার সবুজ। পাকলে রক্ত বেগুনি রং ধারণ করে। গোলাকার আঙুরের মতো বঁইচি খেতে অম্ল ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত। বৈজ্ঞানিক নাম Slacourtia Indica, পরিবার Slacourtiaceae।
বঁইচিগাছের মূলের রস নিউমোনিয়া এবং পাতার নির্যাস জ্বর, কফ ও ডায়রিয়া নিরাময়ে ব্যবহূত হয়। পাতা ও মূল অনেকে সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করে। বাকলের অংশ তিলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বাতের ব্যথা নিরাময়ে মালিশ তৈরি করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনিয়নের পাটকাঠি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট ছেলেমেয়েরা বঁইচি দিয়ে মালা গেঁথে গলায় জড়িয়ে ফলটি খাচ্ছে। সেখানে কথা হয় শিশু আবীর হোসেনের সঙ্গে। কী খাও—জিজ্ঞেস করতেই বলে ওঠে, ‘কাঁটাবহরী।’ একই কথা জানায় সাবিনা ইয়াসমিন, আবিদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন শিশু।
গ্রামের ফরিদউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, এ সময় ছেলেমেয়েরা জঙ্গল থেকে কাঁটাবহরী তুলে আনে। অনেক সময় বড়রাও তাতে ভাগ বসায়। অতিপরিচিত এ ফলটি খেতে খুব মজার।
বরিশাল নগরের ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় রয়েছে একটি বড় বঁইচিগাছ। সাহিত্যিক ও উদ্ভিদপ্রেমী সাইফুল আহসান ৩০ বছর আগে কুয়াকাটা এলাকা থেকে এনে গাছটি রোপণ করেন। তিনি বলেন, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে বঁইচি ফল নিতে বাড়িতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভিড় জমায়। তবে নগরের অনেকেই জানে না, এটি বঁইচি ফল।
ফলটির ব্যাপারে কথা হয় বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামেগঞ্জে আনাচকানাচে জন্ম নেওয়া বঁইচিগাছের গুণাগুণ সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। তাই বন উজাড়ের সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে বঁইচিগাছ। সুস্বাদু বঁইচি ফলে পুষ্টিগুণ যেমন রয়েছে, তেমনি গাছের পাতা ও মূল নিউমোনিয়া, বাত, জ্বর এবং সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে আয়ুর্বেদশাস্ত্রে বহুল ব্যবহূত হচ্ছে।’ঘাটে গোসল করার অভ্যাস আমার সেই ছোট্টবেলা থেকে। এখনো গ্রামে গেলে ঘাটে গোসল না করলে মনটা ভরে না। ঘাট বলতে ইছামতীর ঘাট। দাদির হাত ধরে যেতাম। শুকনো খালের ভেতর দিয়ে ছিল আমাদের পথ। পথের দু’ধারে খালের গায়ে মাথা উঁচু করে থাকত রাজ্যের যত ঝোপ-ঝাড়। আমাকে শামলাতে দাদিকে একটু ঝক্কিই পোহাতে হত। কারণ ঝোপ-জঙ্গলের প্রতি আমার দুর্নিবার আকর্ষণ। হয়তো না বুঝে সুন্দর কোনো মেঠোফল গালে পুরে দিয়েছি। তার ফল হতো মারাত্মক। কখনো বুনোফলের বিষে নীল হয়ে যেত ঠোঁট-মুখ, কখনো চুলকানির চোটে ফুলে লাল হয়ে যেত অবয়ব। তাই দাদিকে সতর্ক থাকতে হতো। কিন্তু ছোট্ট বাচ্চার ঔসুক্যের সাথে পারা কি চাট্টিখানি কথা! তাই দাদি আমাকে হাত ধরে ধরে বুনো ফল-ফল চেনাতে শুরু করলেন। কোনটার কি দোষ-গুণ সেসবও বাদ রইল না। হঠ্যাৎ এক জৈষ্ঠ্য মাসে আমার হাতে তুলে দিলেন মটর দানার সাইজের ছোট্ট কয়েকটা ফল। আমি না বুঝে তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। তিনি বললেন, ‘খাও!”
‘কী এটা?’ আমার প্রশ্ন।
‘বুঁইচে, খেয়ে দেখো না আগে।’
বৈচি ফলের সেদিনের সেই স্বাদ ২২-২৩ বছরের ব্যবধানে আজও আমার মুখে লেগে আছে। সেদিনের পর থেকে যতদিন নদীতে নিয়মিত গোসল করেছি, নিরন্তর খুঁজে চলেছি ওই ফলটা। বলাই বাহুল্য গত ১০ বছরে বৈঁচি ফলের চেহারা একটি বারের জন্যও দেখিনি।
গ্রামেগঞ্জে সাধারণত খেতের পাশে ঝোপঝাড়ে বঁইচি বেশি জন্মায়। অনেক সময় পাহাড়ের ঢালেও জন্মে। গাছ ঝোপালো এবং গাছের শাখা কাঁটাযুক্ত। এ কারণে বঁইচি কাঁটাবহরী নামেও পরিচিত। বর্তমানে বন উজাড় হওয়ায় গাছটি বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায়।
সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বঁইচিগাছে ফুল ধরে। পাঁচ পাপড়িযুক্ত ক্ষুদ্রাকৃতির ফুল। জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে ফল পাকতে শুরু করে। কাঁচা ফল গোলাকার সবুজ। পাকলে রক্ত বেগুনি রং ধারণ করে। গোলাকার আঙুরের মতো বঁইচি খেতে অম্ল ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত। বৈজ্ঞানিক নাম Slacourtia Indica, পরিবার Slacourtiaceae।
বঁইচিগাছের মূলের রস নিউমোনিয়া এবং পাতার নির্যাস জ্বর, কফ ও ডায়রিয়া নিরাময়ে ব্যবহূত হয়। পাতা ও মূল অনেকে সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করে। বাকলের অংশ তিলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বাতের ব্যথা নিরাময়ে মালিশ তৈরি করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনিয়নের পাটকাঠি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট ছেলেমেয়েরা বঁইচি দিয়ে মালা গেঁথে গলায় জড়িয়ে ফলটি খাচ্ছে। সেখানে কথা হয় শিশু আবীর হোসেনের সঙ্গে। কী খাও—জিজ্ঞেস করতেই বলে ওঠে, ‘কাঁটাবহরী।’ একই কথা জানায় সাবিনা ইয়াসমিন, আবিদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন শিশু।
গ্রামের ফরিদউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, এ সময় ছেলেমেয়েরা জঙ্গল থেকে কাঁটাবহরী তুলে আনে। অনেক সময় বড়রাও তাতে ভাগ বসায়। অতিপরিচিত এ ফলটি খেতে খুব মজার।
বরিশাল নগরের ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় রয়েছে একটি বড় বঁইচিগাছ। সাহিত্যিক ও উদ্ভিদপ্রেমী সাইফুল আহসান ৩০ বছর আগে কুয়াকাটা এলাকা থেকে এনে গাছটি রোপণ করেন। তিনি বলেন, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে বঁইচি ফল নিতে বাড়িতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভিড় জমায়। তবে নগরের অনেকেই জানে না, এটি বঁইচি ফল।
ফলটির ব্যাপারে কথা হয় বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামেগঞ্জে আনাচকানাচে জন্ম নেওয়া বঁইচিগাছের গুণাগুণ সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। তাই বন উজাড়ের সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে বঁইচিগাছ। সুস্বাদু বঁইচি ফলে পুষ্টিগুণ যেমন রয়েছে, তেমনি গাছের পাতা ও মূল নিউমোনিয়া, বাত, জ্বর এবং সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে আয়ুর্বেদশাস্ত্রে বহুল ব্যবহূত হচ্ছে।’ঘাটে গোসল করার অভ্যাস আমার সেই ছোট্টবেলা থেকে। এখনো গ্রামে গেলে ঘাটে গোসল না করলে মনটা ভরে না। ঘাট বলতে ইছামতীর ঘাট। দাদির হাত ধরে যেতাম। শুকনো খালের ভেতর দিয়ে ছিল আমাদের পথ। পথের দু’ধারে খালের গায়ে মাথা উঁচু করে থাকত রাজ্যের যত ঝোপ-ঝাড়। আমাকে শামলাতে দাদিকে একটু ঝক্কিই পোহাতে হত। কারণ ঝোপ-জঙ্গলের প্রতি আমার দুর্নিবার আকর্ষণ। হয়তো না বুঝে সুন্দর কোনো মেঠোফল গালে পুরে দিয়েছি। তার ফল হতো মারাত্মক। কখনো বুনোফলের বিষে নীল হয়ে যেত ঠোঁট-মুখ, কখনো চুলকানির চোটে ফুলে লাল হয়ে যেত অবয়ব। তাই দাদিকে সতর্ক থাকতে হতো। কিন্তু ছোট্ট বাচ্চার ঔসুক্যের সাথে পারা কি চাট্টিখানি কথা! তাই দাদি আমাকে হাত ধরে ধরে বুনো ফল-ফল চেনাতে শুরু করলেন। কোনটার কি দোষ-গুণ সেসবও বাদ রইল না। হঠ্যাৎ এক জৈষ্ঠ্য মাসে আমার হাতে তুলে দিলেন মটর দানার সাইজের ছোট্ট কয়েকটা ফল। আমি না বুঝে তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। তিনি বললেন, ‘খাও!”
‘কী এটা?’ আমার প্রশ্ন।
‘বুঁইচে, খেয়ে দেখো না আগে।’
বৈচি ফলের সেদিনের সেই স্বাদ ২২-২৩ বছরের ব্যবধানে আজও আমার মুখে লেগে আছে। সেদিনের পর থেকে যতদিন নদীতে নিয়মিত গোসল করেছি, নিরন্তর খুঁজে চলেছি ওই ফলটা। বলাই বাহুল্য গত ১০ বছরে বৈঁচি ফলের চেহারা একটি বারের জন্যও দেখিনি।
খয়েরি অশ্বথপাতা--বৈঁচি শেয়ালকাটা আমার দেহ ভালবাসে--জীবনানন্দ দাশ
বৈঁচি বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের একটা। বিলুপ্তপ্রায়ের চেয়েও একটু বেশি। আগেই বলেছি গত ১০ বছরে বৈঁচিফল চোখে দেখিনি। তবে গাছ এখনো কিছু কিছু চোখে পড়ে। সচলরা হয়ত ভাবছেন, গাছ চোখে পড়লে ফল দেখা যায় না কেন? সেকথা যথা সময়ে জানাব। তার আগে এর সম্পর্কে প্রাথমিক আলোচনাটা সেরে ফেলা যাক।
বৈঁচি সারাদেশে পাওয়া যেত কিনা আমার জানা নেই। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খুব বেশি দেখা যেত। বরিশাল অঞ্চলে পাওয়া যেত সেটা ধারণা করছি জীবনানন্দের কবিতা থেকে। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বলে পরিচিত বৃহত্তর যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পক্ষে আমি নিজেই সাক্ষি। আরও একজন সাক্ষি আছেন। বড় মাপের সাক্ষি--বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও আমার মতো সাবেক যশোর জেলার মানুষ। শুধু তাই নয় তৎকালীন যশোর নদীয়াকে বিভক্তকারী ইছামতী তাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে গেছে। আমারটা তো আগেই বলেছি। বিভূতিভূষণ তাঁর পথের পাঁচালী আর ইছামতী উপন্যাসে বেশ কয়েকবার বৈঁচি ঝোপের কথা বলেছেন। শুনেছি আগে পাকা বৈঁচি ফলের মালা গেঁথে ছেলেমেয়েরা সেই মালা থেকে ফল ছিঁড়ে খেতে ভালোবাসত। আমাদের সময় কাউকে মালা গাঁথতে দেখিনি। তবে উইকিপিডিয়াতেও এই তথ্য দেখলাম। তবে আমাদের এলাকার ঝোপ-জঙ্গলের ইতিহাস হিসেবে যেটা আমি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মনে করি সেই ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে বৈঁচিফল সম্পর্কে বিবরণটা তুলে দিলাম--
মাতোর মায়ের বয়স খুব বেশি নয়...স্বামীর মৃত্যুর পর কষ্টে পড়িয়া মলিন শীর্ণ হইয়া পড়িয়াছে। বলিল--কুঠির মাঠে গিয়েছিলাম কুড়ুতি--বুঁইচের মালা নেবা?
দূর্গা তো বাগান খুঁজিয়া নিজেই কত বৈঁচিফল প্রায়ই তুলিয়া আনে, ঘাড় নাড়াইয়া বলিল--সে কিনিবে না।
মাতোর মা বলিল--নেও না দিদি ঠাক্রোন, বেশ মিষ্টি বুঁইচে মধুখালির বিলির ধারের থে--তুলেলাম কোঁচড় হইতে একগাছা মালা বাহির করিয়া বলিল--দেখো কত বড় বড়!
শৈশবের স্মৃতিমাখা ইছামতীর সেই খাল। আজও এখানে কিছু বৈঁচিঝোপ দেখা যায়।
বৈঁচি গাছ সাধরণত ঘণ ঝোপ-জঙ্গলের ভেতরে বেড়ে ওঠে। নদীর পাড়, উঁইঢিবি, বাঁশবন, ফসল ক্ষেতের ঘন বেড়ায় এদের বাস। লোকালয়ে তেমন দেখা যায় না। তবে আগের দিনে অনেকে সখ বাড়িতে লাগাতেন।
বৈঁচিকে অনেকে গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ মনে করে। আসলে এখন কেউ এক বাড়তে দেয় না বার বার ছেঁটে ফেলার কারণে গুল্ম হয়ে পড়ে থাকে। যারা সখ করে বাড়িতে লাগায় সেগুলো রীতিমতো বৃক্ষে পরিণত হয়। তবে বৃদ্ধির অন্যান্য বৃক্ষের তুলনায় খুবই কম। আমার এক নানার বাড়িতে ৫০-৬০ বছরের একটা বৈঁচিগাছ ছিল পাঁচ বছর আগেও। এখন অবশ্য নেই। সেটার উচ্চতা ছিল ৩৫-৪০ ফুট। তবে গাছ যতই বড় হোক এর ঝোপালো ভাবটা ঠিকই থাকে। খুব ঘন ডালপালার কারণে এমন হয়। কাণ্ডের বেড় ৩-৪ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। কাণ্ড ও ডাল বেশ শক্ত।
কাণ্ডের একেবারে গোড়া থেকেই ডাল পালা বের হয়। আবার শেকড় থেকেও নতুন চারা বের হতে পারে।
বৈঁচির প্রতিটা পাতার গোড়ায় একটা বড় কাঁটা থাকে। কাঁটা ৩-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। বৈঁচির কাঁটা মারাত্মক জিনিস। বেশ সুঁচালো আর বিষাক্ত। শরীরের কোথাও বিঁধলে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। একে তো ঘন ডালপালা তার ওপর বিকট দর্শন কাঁটা, সুতরাং বৈঁচির মতো দুর্ভেদ্য আর কোনো মেঠো ঝোপ বাংলাদেশে আছে কিনা সন্দেহ। ভয়ঙ্কর কাঁটার কারণেই এখন বৈঁচি গাছ এখন ছেঁটে ফেলা হয়। আরছাঁটা পড়ে বেশির ভাগই শীতকালে মৌসুমি ফসলের সময়। তাই বৈশাখ মাসে যখন এর ফুল ফুটতে শুরু করবে তখন এতে নতুন ডাল-আর নতুন পাতা থাকে। ফুর ফুটতে অন্তত একবছরের পুরোনো ডাল থাকা চাই।
বৈঁচির পাতা হালকা সবুজ। একপক্ষল। বোঁটা খুব ছোট। পাতা ডিম্বাকৃতির। পাতার দৈর্ঘ্য ১-১.৫ ইঞ্চি। প্রস্থ আধা থেকে পৌনে এক ইঞ্চি। পাতা দেখতে অনেকটা কুরের পাতার মতো। তবে কুলের পাতার চেয়ে বেশ পুরু। কুেেলর পাতা খসখসে বৈঁচির পাতা অনেকটায় মসৃণ। বৈুঁচির খুব ছোট্ট ছোট্ট পাঁচ পাপড়ির ফুল। বছর দশেক দেখা নেই বলে ফুলের প্ঙ্খুানুপুঙ্খ বর্ণণা দিতে পারব না। আগ্রহীরা উইকিপিডিয়াঘেঁটে আসতে পারেন।
এই ছবিটা উইপিডিয়ার
বৈঁচির ফল মটর দানার চেয়ে সামান্য বড়। গোল সবুজ রংয়ের। অনেকটা কুলের মতো দেখতে। ভেতরে শক্ত দ্বিবীজপত্রী একটা করে শক্ত বিঁচি থাকে।
এই ছবিটা উদ্ভিদ জগত থেকে নেয়া
বৈঁচির কাঁচা ফল হালকা সবুজ রংয়ের। ডাসা ফল হালকা বাদামি আর পাকা ফল জামরংয়ের। অর্থাৎ কালচে বেগুনি রংয়ের।
বৈঁচি বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ। গড়ে ঠিক কত বছর পর্যন্ত বাঁচে বলা মুশকিল। অন্তত আমার জন্য। বৈঁচির বৈজ্ঞানিক নাম Flacourtia indica.
তপ্ত চোখের জলে, পুকুর, উঁইঢিবি, বৈঁচিবন, বাঁশবাগান--সব ঝাপসা হইয়া আসে।
--বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন