গাব এমন একটা ফল বাংলা সাহিত্যে যা স্থান পেয়েছে অদ্ভুতভাবে! 'গাবগাছের ভূত' বা 'গাবের আঠার মতো লেগে থাকা'- এমনসব বিষয়ের জন্মদাতা এই ফলটি! যে ফলকে নিয়ে এতকিছু তা কিন্তু খুব একটা সুস্বাদু নয়! আমাদের যে দেশি গাব অর্থাত্ Indian Persimmon, তা হালকা মিষ্টি, কষযুক্ত একটি ফল। এটি কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে এবং পাকলে হলদেটে রং ধারণ করে। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অঞ্চলে এই গাব প্রচুর জন্মে। তবে এই গাব খাবার হিসেবে কিন্তু খুব বেশি সমাদর পায়নি। বরং ভেষজ চিকিত্সায় ওষুধ হিসেবে এর ব্যবহার বেশি। গাবের আঠা জেলেরা মাছ ধরার জালে লাগায়। এতে জাল মজবুত হয় ও সহজে পচন ধরে না।
আমাদের দেশে আরেক ধরনের গাব পাওয়া যায়। একে বলা হয় বিলাতি গাব। সুগন্ধীযুক্ত গাঢ় লাল এই ফল দেখতে তো আকর্ষণীয় বটেই খেতেও ভীষণ মজা! বিলাতি গাব নামে বিলাতি তো বটেই এর আদি নিবাসও আমাদের দেশের বাইরে! বিলাতি গাবের আদি নিবাস ফিলিপাইনে। কিন্তু এর স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণের কারণে প্রায় সারা বিশ্বেই এর চাষ হয়।
বিলাতি গাবের ইংরেজি নাম Malobo। একে Korean mango বা Velvet-apple নামেও ডাকা হয়। কারণ এটি দেখতে অনেকটা লাল আপেলের মতোই এবং এর গা মখমলের মতো মসৃণ! বিলাতি গাবের বৈজ্ঞানিক নাম Diospyros balncoi। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের চিরসবুজ বৃক্ষ।
আকারে মাঝারি, লম্বায় ১০-৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে গাছে ফুল ফোটে এবং জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়। কাঁচা ফল হালকা সবুজ বা বাদামি হয়। ফল পাকলে উজ্জ্বল বাদামি বা গাঢ় লালবর্ণ ধারণ করে। পাকা ফলের ভেতরটা সাদা এবং মাখনের মতো নরম। পাকা ফল সুগন্ধী এবং বেশ লোভনীয়।
বিলাতি গাব ফল হিসেবে খাবার পাশাপাশি এটা দিয়ে জুস, ডেজার্ট, ফ্রুটকেক, ক্রিম ইত্যাদিও তৈরি করা হয়। এ ফলের পুষ্টিগুণও ব্যাপক। পাকা বিলাতি গাবের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে -
খাদ্যশক্তি- ৫০৪ কিলোক্যালরি
জলীয় অংশ- ৮৩.০-৮৪.৩ গ্রাম
আমিষ- ২.৮ গ্রাম
চর্বি- ০.২ গ্রাম
শর্করা- ১১.৮ গ্রাম
খাদ্যআঁশ- ১.৮ গ্রাম
চিনি- ১১.৪৭ গ্রাম
ক্যালসিয়াম- ৪৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ- ৩৫ আইইউ
ফসফরাস- ১৮ মিলিগ্রাম
আয়রন- ০.৬ মিলিগ্রাম
থায়ামিন- ০.০২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি- ১৮ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম- ১১০ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম- ৩০৩ মিলিগ্রাম
জলীয় অংশ- ৮৩.০-৮৪.৩ গ্রাম
আমিষ- ২.৮ গ্রাম
চর্বি- ০.২ গ্রাম
শর্করা- ১১.৮ গ্রাম
খাদ্যআঁশ- ১.৮ গ্রাম
চিনি- ১১.৪৭ গ্রাম
ক্যালসিয়াম- ৪৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ- ৩৫ আইইউ
ফসফরাস- ১৮ মিলিগ্রাম
আয়রন- ০.৬ মিলিগ্রাম
থায়ামিন- ০.০২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি- ১৮ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম- ১১০ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম- ৩০৩ মিলিগ্রাম
পুষ্টিগুণের পাশাপাশি বিলাতি গাবের রয়েছে আরো অনেক গুণাবলি যা আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। যেমন -
- ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ, কফ, কাশি ইত্যাদি উপশমে বিলাতি গাব সহায়তা করে।
- ব্লাড প্রেশার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিলাতি গাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
- বিলাতি গাব অন্ত্রের বিভিন্ন রোগ এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
- এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন