টিপাফল এক ধরনের টক মিষ্টি ফল। এই ফলটি গরমের দিনে হকারদের কাছে পাওয়া যায়। ঢাকার স্কুল কলেজের সামনে পর্যাপ্ত পরিমানে ফলটির দেখা মেলে। এই ফলের অন্যান্য নামগুলো হলো- টিপফল, টিপটিপানি, লুকলুকি, পেলাগোটা, প্যালা, পায়েলা, ঝিটকি, পলাগোটা, টরফই, পানিয়ালা, পানি আমলা, পাইন্না, পাইন্যাগুলা, বেহুই ইত্যাদি। এর ইংরেজি নাম Indian plum বা coffee plum এবং বৈজ্ঞানিক নাম Flacourtia jangomas বা Flacourtia cataphracta. এটি নিচুভূমি এবং পাহাড়ি এলাকার বৃষ্টিবহুল অঞ্চলের 'উইলো' পরিবারভুক্ত বৃক্ষ।এটি ছোট গুল্ম বা বৃক্ষ যা দশ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। গাছ কাঁটাযুক্ত। কাঁটাগুলো শাখান্বিত ও যুথবদ্ধ। ডালপালাতেও কাঁটা থাকে। পাতা একক, ডিম্বাকৃতি, কিছুটা লম্বাটে। অগ্রভাগ সূঁচালো। সবুজ রংয়ের পাতা কিছুটা ঢেউ খেলানো থাকে। পাতার কিনারায় সামান্য খাঁজ কাটা থাকে। গাছে মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে। এর ফুল ছোট, সাদাটে সবুজ থেকে বেগুনী এবং সুগন্ধী। ফুল ফোটে গুচ্ছাকারে। ফল গোলাকার মার্বেলের মতো, খোসা পাতলা ও মসৃণ। কাচা অবস্থায় সবুজ। কাচা ফলও খাওয়া যায়। ফল পাকে জুলাই-আগস্ট মাসে। পাকা ফলের সংরক্ষণ গুণ ভালো। ফল পাকলে লালচে বেগুনী রঙের হয়। পাকা ফলের ভেতরটা বাদামী বা কালচে গোলাপী রঙের। টিপা ফল পাকার পরে টিপে নরম করে খেতে হয়; এই কারনে এমন নামকরন হয়েছে। আচার বা শরবত করেও এটি খাওয়া হয়। এর ছালে ঔষধি গুণ আছে বলেও অনেকে ধারনা করে থাকেন।কাঠের জন্যেও এই গাছ চাষ করা হয়। 'কুইন্সল্যান্ড ফ্রুট ফ্লাই' (Bactrocera tryoni) নামক এক প্রকার মাছির আবাস ও আশ্রয় হিসেবে এই গাছের পরিচিতি রয়েছে।অপ্রচলিত এই ফলটি এখন বাংলাদেশে অনেক সহজলভ্য; এর চাষ ও বানিজ্যিক উৎপাদন ধীরে ধীরে বাড়ছে। লুকলুকি বা পাইন্ন্যাগুলা একটি মিষ্টি ও সুস্বাদু দেশীয় ফল। দেখতে আঙুর ফলের মতো। এ ফলে রয়েছে প্রচুর টসটসে রস। তাই স্থানীয় ভাষায় এর নাম ‘পাইন্ন্যাগুলা। পাইন্ন্যাগুলা ফলে রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ আয়রন। সালফার, ফসফেট ছাড়াও ১০ ভাগ রয়েছে ভিটামিন সি। অন্যান্য উপাদানও রয়েছে সমভাবে। আমাদের শরীরের জন্য এই ফলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসুন জেনে নেয়া যাক টিপাফলের গুণ সম্পর্কে। * ওষুধি ফল হিসেবে পাইন্ন্যাগুলার বেশ কদর রয়েছে। এ ফল খেলে হজমশক্তি ও লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। * হৃদরোগীদের জন্য এটি উপকারী ভেষজ ঔষধের কাজ করে। * এই ফলের ভিটামিন সি খাবারের প্রতি রুচি বাড়িয়ে মুখের ক্ষত সারাতে কার্য কর ভূমিকা পালন করে। * এতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। * কারো এসিডিটির সমস্যা থাকলে তা দ্রুত দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। * টিপাফলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামে ভরপুর। শরীরে শক্তি যোগাতে টিপাফলের গুরুত্ব অপরিসীম। * নিয়মিত টিপাফল খেলে শরীরের বিষক্রিয় পদার্থ বের করে দেয়। * এই গাছের পাতা ও ফল ডায়রিয়া রোগের প্রতিরোধক। * শুকনো পাতা ব্রংকাইটিস রোগের জন্য বিশেষ উপকারী। * টিপাফলের শিকড় দাঁতের ব্যাথা নিরাময়ে কাজ করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন