বুধবার, ১৫ জুন, ২০১৬

বাংলাদেশের ফলঃ জগডুমুর

জগডুমুর বা যজ্ঞডুমুর গাছের বৈজ্ঞনিক নাম Ficus racemosa বা Ficus glomerata যা Moraceae পরিবারভুক্ত। একে ইংরেজিতে 'Cluster Fig Tree', 'Indian Fig Tree' বা 'Goolar (Gular) Fig' বলা হয়। এর আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মালয়েশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া। এর ফল গাছের কান্ডে থোকায় থোকায় হয়। এটি প্রধানতঃ বন্য পশু পাখির খাদ্য। উত্তর অস্ট্রেলিয়াতে এই গাছ প্রজাপতির খাদ্য হিসেবে লাগানো হয়।




চোরবেকগুলো
বৈজ্ঞানিক নাম: Ficus racemosa
সমনাম: Ficus glomerata Roxb.
বাংলা নাম: যজ্ঞডুমুর, জগডুমুর, যজ্ঞ ডিমারু,   
ইংরেজি নাম: Cluster Fig Tree, Indian Fig Tree.
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য:  Plantae - Plants
বর্গ: Rosales
পরিবারMoraceae
গণ:  Ficus
প্রজাতি:  Ficus racemosa (L.)
পরিচিতি: উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের বৃক্ষ। বট পরিবারের উদ্ভিদ। এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার উদ্ভিদ। এটির ফল রান্না করে এবং পাকার পরে খাওয়া যায়। দেশি রেসাস বানরের এটি প্রধান খাবার। অনেক পাখির পছন্দের খাবার।
এছাড়া আরেক ধরনের ডুমুর বাংলাদেশে পাওয়া যায় যার স্থানীয় চাকমা ভাষায় নাম চোরবেকগুলোফল দেখতে অনেকটা ডুমুর ফলের মত, তবে পাতার মধ্যে বৈসাদৃশ্য রয়েছেডুমুর ফল গাছের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ধরে কিন্তু এই ফল শুধুমাত্র গোড়াতেই ধরেগাছের গোড়ার দিকে লতার মত কিছু শিকড় বের হয় এবং এই শিকড়গুলিতেই থোকায় থোকায় ধরে এই ফলকাঁচা অবস্থায় হালকা সবুজ, কিন্তু পাকলে লাল রঙ ধারকরেপাকলে ফলটি বাকল সুদ্ধ খাওয়া যায় এবং খেতে খুবই মিষ্টি

বিস্তৃতি: যজ্ঞডুমুর সারাদেশে দেখা যায় কিন্তু চোরবেকগুলো শুধু পাহাড়ি অঞ্চলে দেখা যায়

বাংলাদেশের ফলঃ করমচা

করমচা, টক জাতীয় গ্রীষ্মকালীন ফলের নাম। এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্যারিসা ক্যারোন্ডাম। ইংরেজিতে একে Bengal currant বা Christ's thorn বলা হয়। Carissa গণভুক্ত কাঁটাময় গুল্মজাতীয় করমচা উদ্ভিদটি এশিয়া, আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে পাওয়া যায়। কাঁচা ফল সবুজ, পরিণত অবস্থায় যা ম্যাজেন্টা লাল-রং ধারন করে। অত্যন্ত টক স্বাদের এই ফলটি খাওয়া যায়, যদিও এর গাছ বিষাক্ত। করমচার ঝোপ দেখতে সুন্দর। টক স্বাদের ফল করমচা। কাঁটায় ভরা এ গাছটি গ্রাম থেকে এখন শহরেও চাষ হয়। কারও কারও বাড়ির ছাদ কিংবা বারান্দায়ও দেখা মেলে করমচার। করমচা পুষ্টিগুণে যেমন সমৃদ্ধ। কাঁটাযুক্ত গুল্মজাতীয় এ উদ্ভিদটি প্রাকৃতিক ভাবেই জন্মে। তবে এটা চাষও করা সম্ভব। ঝোঁপের মতো বলে গ্রামাঞ্চলে এই গাছ বাড়ির সীমানায় বেড়া হিসেবে লাগানো হয়। তেমনি আছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। প্রতি ১০০ গ্রাম করমচায় আছে শর্করা-১৪ গ্রাম, প্রোটিন-০.৫ গ্রাম, ভিটামিন এ-৪০ আইইউ, ভিটামিন সি- ৩৮ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লেভিন-০.১ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন-০.২ মিলিগ্রাম, আয়রন-১.৩ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম-১৬ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম-২৬০ মিলিগ্রাম, কপার-০.২ মিলিগ্রাম। তবে যাদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি, তাঁদের করমচা না খাওয়াই ভালো। এই মৌসুমে তাজা করমচা খান নিয়মিত, অনেক রোগ এড়ানো যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, বাজারে প্যাকেটে করে চেরির নামে কৃত্রিম রং দেওয়া করমচা বিক্রি হয়। এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। কেনার সময় তাই সতর্ক থাকতে হবে।
 করমচায় চর্বি এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল থাকে না।
 ভিটামিন সি-তে ভরপুর করমচা মুখে রুচি ফিরিয়ে দেয়।
 করমচা রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রেখে হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষা দেয়।
 শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ কমাতেও সাহায্য করে।
 যকৃত ও কিডনির রোগ প্রতিরোধে আছে বিশেষ ভূমিকা।
 মৌসুমি সর্দি-জ্বর, কাশিতে করমচা খান বেশি করে।
 করমচা কখনো কৃমিনাশক হিসেবে ওষুধের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
 এ ছাড়া পেটের নানা অসুখের দাওয়াই করমচা।
 শরীরের ক্লান্তি দূর করে করমচা শরীরকে চাঙা রাখে।
 বাতরোগ কিংবা ব্যথাজনিত জ্বর নিরাময়ে করমচা খুব উপকারী।
 করমচাতে থাকা ভিটামিন এ চোখের জন্য খুবই উপকারী।
 এটি ত্বক ভালো রাখে ও রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
 এতে থাকা ভিটামিন সি দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষা দেয়।

বাংলাদেশের ফলঃ ডেওয়া

Bangla name: ডেওয়া
English name: Lakoocha
Botanic name: Artocarpus lakoocha
Family name: Moraceae

অরুচি ও পেটের বায়ুনাশে ডেউয়া এক অমৃত ফল। পাকলে ডেউয়া মধুর অমস্নরসযুক্ত হয়। কাঁচা ডেউয়া টক, ক্ষুধা দূর করে। পাকা ফল ক্ষুধাবর্ধক হয়। আবার পাকা ডেউয়া পিত্ত ও যকৃতের উপকারী। ডেউয়া বেশি খেলে ক্লীবতা আনে।


     বাংলা নাম ডেলো মাদার, ডেফল, ডেঁওফল, ডেহুয়া, ডেওয়া চাম, বার্তা, দালো ও ডেউয়া। শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট বড় গাছ। পাতা : বড়, গোল, ৬-১২ ইঞ্চি লম্বা ও ৪-৭ ইঞ্চি চওড়া, খসখসে। বৃন্ত : লম্বা। ফুল : দুই রকম_ স্ত্রী ও পুরুষ। ফল : কাঁচা অবস্থায় লালচে, পাকা অবস্থায় পীত রঙ।

পঞ্চবটী বনে থাকে অশ্বত্থ, বট, বেল, অশোক ও আমলকী গাছ। প্রতিটি গাছ উপকারী, গুণেরও শেষ নেই। কিন্তু ওই শাল, পিয়াল, তমাল, কাঁঠাল, আম, চন্দন, চাঁপা, খদির, পলাশ প্রভৃতি গাছের মাঝে ডেউয়া না থাকলে বনের পূর্ণতা পায় না। সমাজে ধোপা, নাপিত, মেথর না থাকলে চলে না, পৃথিবীও অচল হয়ে যাবে। বোটানিক্যাল গার্ডেনে এ জন্য হিজলের পাশে ডুমুর আর ডেউয়ার স্থান থাকা চাই। আম, কাঁঠাল, তাল, জাম, আমলকীর পাশে এ জন্য ডেউয়া বা গাবের স্থান হয়।
ডেউয়ার ভদ্র নাম হলো ডেলো মাদার। পাড়াগাঁয়ে একে বলে ডেউয়া, পাকলে ডেউয়া মধুর অমস্নরসযুক্ত হয়। ডেউয়া শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট বড় গাছ। বড় বড় পাতা। গোল-গোল, ৬-১২ ইঞ্চি লম্বা ও ৪-৭ ইঞ্চি চওড়া হয়। পাতা খসখসে, দেখতে অনেকটা কাকডুমুরের পাতার মতো। কাকডুমুরের পাতা থেকে ডেউয়ার পাতা বড়। পাতার বৃন্ত লম্বা, আধ ইঞ্চি থেকে এক ইঞ্চি লম্বা। ফুল দুই রকম। স্ত্রী ও পুরুষ আলাদা আলাদা।
স্ত্রীফুল আকারে বড়, বোঁটা ছোট ও মসৃণ। কিন্তু ফুলের পাপড়ি নেই, ছোট গুটির আকারে হয়। মঞ্জরিদ-ের ওপর ফুল সাজানো থাকে। স্ত্রী-জাতীয় ফুল থেকেই ফল হয়। ফলের বাইরের আবরণ অসমান এবড়ো-খেবড়ো। ফল কাঁচা অবস্থায় লালচে, পাকলে বাইরের রঙ পীত, কিন্তু ভিতরের শাঁস লাল হয়। কাঁঠালের কোয়ার মতো এবং তার মাঝে বীজও থাকে।
সাধারণত ফাল্গুন মাসে ফুল হয়, আষাঢ়ে পাকতে শুরু করে। পাকলে ডেউয়া মধুর অমস্নরসযুক্ত হয়। কাঁচা ডেউয়া টক, ক্ষুধা দূর করে। পাকা ফল ক্ষুধাবর্ধক হয়। আবার পাকা ডেউয়া পিত্ত ও যকৃতের উপকারী। আবার বেশি খেলে ক্লীবতা আনে। অরুচি ও পেটের বায়ুনাশে ডেউয়া এক অমৃত ফল। ব্রণের দূষিত ক্ষতের পুঁজ বের করে আনার জন্য ডেউয়ার ছালের পুলটিসের ব্যবহার হয়। কাঁচা ডেউয়ার রস এক-দেড় চা-চামচ এক কাপ ঠা-া পানিতে মিশিয়ে কয়েক দিন খেলে অস্বাভাবিক মেদ কমে। তবে মেদ কমাতে গেলে আলু, চিনি বা মিষ্টি খাওয়া না কমালে কিছুতে কিছু হবে না।

বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১৬

বাংলাদেশের ফলঃ বৈচি

‘ আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই...’। বহুলপরিচিত এ ছড়াটি গ্রীষ্মকালে গ্রামে একটু অন্যভাবে শুনলে অবাক হওয়ার কথা নয়। ‘আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা বঁইচি (কাঁটাবহরী) তলায় যাই, বঁইচি মালা গলায় দিয়ে মুখে তুলে খাই।’ শহুরে জীবনে অপরিচিত হলেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি জনপ্রিয় ফল কাঁটাবহরী বা বঁইচি। ছোট গোলাকার ফলের মালা গেঁথে ছোট ছেলেমেয়েরা তা মজা করে খায়।
গ্রামেগঞ্জে সাধারণত খেতের পাশে ঝোপঝাড়ে বঁইচি বেশি জন্মায়। অনেক সময় পাহাড়ের ঢালেও জন্মে। গাছ ঝোপালো এবং গাছের শাখা কাঁটাযুক্ত। এ কারণে বঁইচি কাঁটাবহরী নামেও পরিচিত। বর্তমানে বন উজাড় হওয়ায় গাছটি বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায়।
সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বঁইচিগাছে ফুল ধরে। পাঁচ পাপড়িযুক্ত ক্ষুদ্রাকৃতির ফুল। জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে ফল পাকতে শুরু করে। কাঁচা ফল গোলাকার সবুজ। পাকলে রক্ত বেগুনি রং ধারণ করে। গোলাকার আঙুরের মতো বঁইচি খেতে অম্ল ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত। বৈজ্ঞানিক নাম Slacourtia Indica, পরিবার Slacourtiaceae।
বঁইচিগাছের মূলের রস নিউমোনিয়া এবং পাতার নির্যাস জ্বর, কফ ও ডায়রিয়া নিরাময়ে ব্যবহূত হয়। পাতা ও মূল অনেকে সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করে। বাকলের অংশ তিলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বাতের ব্যথা নিরাময়ে মালিশ তৈরি করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনিয়নের পাটকাঠি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট ছেলেমেয়েরা বঁইচি দিয়ে মালা গেঁথে গলায় জড়িয়ে ফলটি খাচ্ছে। সেখানে কথা হয় শিশু আবীর হোসেনের সঙ্গে। কী খাও—জিজ্ঞেস করতেই বলে ওঠে, ‘কাঁটাবহরী।’ একই কথা জানায় সাবিনা ইয়াসমিন, আবিদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন শিশু।
গ্রামের ফরিদউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, এ সময় ছেলেমেয়েরা জঙ্গল থেকে কাঁটাবহরী তুলে আনে। অনেক সময় বড়রাও তাতে ভাগ বসায়। অতিপরিচিত এ ফলটি খেতে খুব মজার।
বরিশাল নগরের ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় রয়েছে একটি বড় বঁইচিগাছ। সাহিত্যিক ও উদ্ভিদপ্রেমী সাইফুল আহসান ৩০ বছর আগে কুয়াকাটা এলাকা থেকে এনে গাছটি রোপণ করেন। তিনি বলেন, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে বঁইচি ফল নিতে বাড়িতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভিড় জমায়। তবে নগরের অনেকেই জানে না, এটি বঁইচি ফল।
ফলটির ব্যাপারে কথা হয় বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামেগঞ্জে আনাচকানাচে জন্ম নেওয়া বঁইচিগাছের গুণাগুণ সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। তাই বন উজাড়ের সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে বঁইচিগাছ। সুস্বাদু বঁইচি ফলে পুষ্টিগুণ যেমন রয়েছে, তেমনি গাছের পাতা ও মূল নিউমোনিয়া, বাত, জ্বর এবং সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে আয়ুর্বেদশাস্ত্রে বহুল ব্যবহূত হচ্ছে।’ঘাটে গোসল করার অভ্যাস আমার সেই ছোট্টবেলা থেকে। এখনো গ্রামে গেলে ঘাটে গোসল না করলে মনটা ভরে না। ঘাট বলতে ইছামতীর ঘাট। দাদির হাত ধরে যেতাম। শুকনো খালের ভেতর দিয়ে ছিল আমাদের পথ। পথের দু’ধারে খালের গায়ে মাথা উঁচু করে থাকত রাজ্যের যত ঝোপ-ঝাড়। আমাকে শামলাতে দাদিকে একটু ঝক্কিই পোহাতে হত। কারণ ঝোপ-জঙ্গলের প্রতি আমার দুর্নিবার আকর্ষণ। হয়তো না বুঝে সুন্দর কোনো মেঠোফল গালে পুরে দিয়েছি। তার ফল হতো মারাত্মক। কখনো বুনোফলের বিষে নীল হয়ে যেত ঠোঁট-মুখ, কখনো চুলকানির চোটে ফুলে লাল হয়ে যেত অবয়ব। তাই দাদিকে সতর্ক থাকতে হতো। কিন্তু ছোট্ট বাচ্চার ঔসুক্যের সাথে পারা কি চাট্টিখানি কথা! তাই দাদি আমাকে হাত ধরে ধরে বুনো ফল-ফল চেনাতে শুরু করলেন। কোনটার কি দোষ-গুণ সেসবও বাদ রইল না। হঠ্যাৎ এক জৈষ্ঠ্য মাসে আমার হাতে তুলে দিলেন মটর দানার সাইজের ছোট্ট কয়েকটা ফল। আমি না বুঝে তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। তিনি বললেন, ‘খাও!”
‘কী এটা?’ আমার প্রশ্ন।
‘বুঁইচে, খেয়ে দেখো না আগে।’
বৈচি ফলের সেদিনের সেই স্বাদ ২২-২৩ বছরের ব্যবধানে আজও আমার মুখে লেগে আছে। সেদিনের পর থেকে যতদিন নদীতে নিয়মিত গোসল করেছি, নিরন্তর খুঁজে চলেছি ওই ফলটা। বলাই বাহুল্য গত ১০ বছরে বৈঁচি ফলের চেহারা একটি বারের জন্যও দেখিনি।

খয়েরি অশ্বথপাতা--বৈঁচি শেয়ালকাটা আমার দেহ ভালবাসে--জীবনানন্দ দাশ
বৈঁচি বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের একটা। বিলুপ্তপ্রায়ের চেয়েও একটু বেশি। আগেই বলেছি গত ১০ বছরে বৈঁচিফল চোখে দেখিনি। তবে গাছ এখনো কিছু কিছু চোখে পড়ে। সচলরা হয়ত ভাবছেন, গাছ চোখে পড়লে ফল দেখা যায় না কেন? সেকথা যথা সময়ে জানাব। তার আগে এর সম্পর্কে প্রাথমিক আলোচনাটা সেরে ফেলা যাক।
বৈঁচি সারাদেশে পাওয়া যেত কিনা আমার জানা নেই। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খুব বেশি দেখা যেত। বরিশাল অঞ্চলে পাওয়া যেত সেটা ধারণা করছি জীবনানন্দের কবিতা থেকে। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বলে পরিচিত বৃহত্তর যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পক্ষে আমি নিজেই সাক্ষি। আরও একজন সাক্ষি আছেন। বড় মাপের সাক্ষি--বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও আমার মতো সাবেক যশোর জেলার মানুষ। শুধু তাই নয় তৎকালীন যশোর নদীয়াকে বিভক্তকারী ইছামতী তাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে গেছে। আমারটা তো আগেই বলেছি। বিভূতিভূষণ তাঁর পথের পাঁচালী আর ইছামতী উপন্যাসে বেশ কয়েকবার বৈঁচি ঝোপের কথা বলেছেন। শুনেছি আগে পাকা বৈঁচি ফলের মালা গেঁথে ছেলেমেয়েরা সেই মালা থেকে ফল ছিঁড়ে খেতে ভালোবাসত। আমাদের সময় কাউকে মালা গাঁথতে দেখিনি। তবে উইকিপিডিয়াতেও এই তথ্য দেখলাম। তবে আমাদের এলাকার ঝোপ-জঙ্গলের ইতিহাস হিসেবে যেটা আমি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মনে করি সেই ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে বৈঁচিফল সম্পর্কে বিবরণটা তুলে দিলাম--
মাতোর মায়ের বয়স খুব বেশি নয়...স্বামীর মৃত্যুর পর কষ্টে পড়িয়া মলিন শীর্ণ হইয়া পড়িয়াছে। বলিল--কুঠির মাঠে গিয়েছিলাম কুড়ুতি--বুঁইচের মালা নেবা?
দূর্গা তো বাগান খুঁজিয়া নিজেই কত বৈঁচিফল প্রায়ই তুলিয়া আনে, ঘাড় নাড়াইয়া বলিল--সে কিনিবে না।
মাতোর মা বলিল--নেও না দিদি ঠাক্রোন, বেশ মিষ্টি বুঁইচে মধুখালির বিলির ধারের থে--তুলেলাম কোঁচড় হইতে একগাছা মালা বাহির করিয়া বলিল--দেখো কত বড় বড়!

শৈশবের স্মৃতিমাখা ইছামতীর সেই খাল। আজও এখানে কিছু বৈঁচিঝোপ দেখা যায়।
বৈঁচি গাছ সাধরণত ঘণ ঝোপ-জঙ্গলের ভেতরে বেড়ে ওঠে। নদীর পাড়, উঁইঢিবি, বাঁশবন, ফসল ক্ষেতের ঘন বেড়ায় এদের বাস। লোকালয়ে তেমন দেখা যায় না। তবে আগের দিনে অনেকে সখ বাড়িতে লাগাতেন।
বৈঁচিকে অনেকে গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ মনে করে। আসলে এখন কেউ এক বাড়তে দেয় না বার বার ছেঁটে ফেলার কারণে গুল্ম হয়ে পড়ে থাকে। যারা সখ করে বাড়িতে লাগায় সেগুলো রীতিমতো বৃক্ষে পরিণত হয়। তবে বৃদ্ধির অন্যান্য বৃক্ষের তুলনায় খুবই কম। আমার এক নানার বাড়িতে ৫০-৬০ বছরের একটা বৈঁচিগাছ ছিল পাঁচ বছর আগেও। এখন অবশ্য নেই। সেটার উচ্চতা ছিল ৩৫-৪০ ফুট। তবে গাছ যতই বড় হোক এর ঝোপালো ভাবটা ঠিকই থাকে। খুব ঘন ডালপালার কারণে এমন হয়। কাণ্ডের বেড় ৩-৪ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। কাণ্ড ও ডাল বেশ শক্ত।

কাণ্ডের একেবারে গোড়া থেকেই ডাল পালা বের হয়। আবার শেকড় থেকেও নতুন চারা বের হতে পারে।

বৈঁচির প্রতিটা পাতার গোড়ায় একটা বড় কাঁটা থাকে। কাঁটা ৩-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। বৈঁচির কাঁটা মারাত্মক জিনিস। বেশ সুঁচালো আর বিষাক্ত। শরীরের কোথাও বিঁধলে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। একে তো ঘন ডালপালা তার ওপর বিকট দর্শন কাঁটা, সুতরাং বৈঁচির মতো দুর্ভেদ্য আর কোনো মেঠো ঝোপ বাংলাদেশে আছে কিনা সন্দেহ। ভয়ঙ্কর কাঁটার কারণেই এখন বৈঁচি গাছ এখন ছেঁটে ফেলা হয়। আরছাঁটা পড়ে বেশির ভাগই শীতকালে মৌসুমি ফসলের সময়। তাই বৈশাখ মাসে যখন এর ফুল ফুটতে শুরু করবে তখন এতে নতুন ডাল-আর নতুন পাতা থাকে। ফুর ফুটতে অন্তত একবছরের পুরোনো ডাল থাকা চাই।

বৈঁচির পাতা হালকা সবুজ। একপক্ষল। বোঁটা খুব ছোট। পাতা ডিম্বাকৃতির। পাতার দৈর্ঘ্য ১-১.৫ ইঞ্চি। প্রস্থ আধা থেকে পৌনে এক ইঞ্চি। পাতা দেখতে অনেকটা কুরের পাতার মতো। তবে কুলের পাতার চেয়ে বেশ পুরু। কুেেলর পাতা খসখসে বৈঁচির পাতা অনেকটায় মসৃণ। বৈুঁচির খুব ছোট্ট ছোট্ট পাঁচ পাপড়ির ফুল। বছর দশেক দেখা নেই বলে ফুলের প্ঙ্খুানুপুঙ্খ বর্ণণা দিতে পারব না। আগ্রহীরা উইকিপিডিয়াঘেঁটে আসতে পারেন।

এই ছবিটা উইপিডিয়ার
বৈঁচির ফল মটর দানার চেয়ে সামান্য বড়। গোল সবুজ রংয়ের। অনেকটা কুলের মতো দেখতে। ভেতরে শক্ত দ্বিবীজপত্রী একটা করে শক্ত বিঁচি থাকে।

এই ছবিটা উদ্ভিদ জগত থেকে নেয়া 
বৈঁচির কাঁচা ফল হালকা সবুজ রংয়ের। ডাসা ফল হালকা বাদামি আর পাকা ফল জামরংয়ের। অর্থাৎ কালচে বেগুনি রংয়ের।

বৈঁচি বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ। গড়ে ঠিক কত বছর পর্যন্ত বাঁচে বলা মুশকিল। অন্তত আমার জন্য। বৈঁচির বৈজ্ঞানিক নাম Flacourtia indica.

তপ্ত চোখের জলে, পুকুর, উঁইঢিবি, বৈঁচিবন, বাঁশবাগান--সব ঝাপসা হইয়া আসে।
--বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাংলাদেশের ফলঃ টিপাফল

tipafol
 টিপাফল এক ধরনের টক মিষ্টি ফল। এই ফলটি গরমের দিনে হকারদের কাছে পাওয়া যায়। ঢাকার স্কুল কলেজের সামনে পর্যাপ্ত পরিমানে ফলটির দেখা মেলে। এই ফলের অন্যান্য নামগুলো হলো- টিপফল, টিপটিপানি, লুকলুকি, পেলাগোটা, প্যালা, পায়েলা, ঝিটকি, পলাগোটা, টরফই, পানিয়ালা, পানি আমলা, পাইন্না, পাইন্যাগুলা, বেহুই ইত্যাদি। এর ইংরেজি নাম Indian plum বা coffee plum এবং বৈজ্ঞানিক নাম Flacourtia jangomas বা Flacourtia cataphracta. এটি নিচুভূমি এবং পাহাড়ি এলাকার বৃষ্টিবহুল অঞ্চলের 'উইলো' পরিবারভুক্ত বৃক্ষ।এটি ছোট গুল্ম বা বৃক্ষ যা দশ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। গাছ কাঁটাযুক্ত। কাঁটাগুলো শাখান্বিত ও যুথবদ্ধ। ডালপালাতেও কাঁটা থাকে। পাতা একক, ডিম্বাকৃতি, কিছুটা লম্বাটে। অগ্রভাগ সূঁচালো। সবুজ রংয়ের পাতা কিছুটা ঢেউ খেলানো থাকে। পাতার কিনারায় সামান্য খাঁজ কাটা থাকে। গাছে মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে। এর ফুল ছোট, সাদাটে সবুজ থেকে বেগুনী এবং সুগন্ধী। ফুল ফোটে গুচ্ছাকারে। ফল গোলাকার মার্বেলের মতো, খোসা পাতলা ও মসৃণ। কাচা অবস্থায় সবুজ। কাচা ফলও খাওয়া যায়। ফল পাকে জুলাই-আগস্ট মাসে। পাকা ফলের সংরক্ষণ গুণ ভালো। ফল পাকলে লালচে বেগুনী রঙের হয়। পাকা ফলের ভেতরটা বাদামী বা কালচে গোলাপী রঙের। টিপা ফল পাকার পরে টিপে নরম করে খেতে হয়; এই কারনে এমন নামকরন হয়েছে। আচার বা শরবত করেও এটি খাওয়া হয়। এর ছালে ঔষধি গুণ আছে বলেও অনেকে ধারনা করে থাকেন।কাঠের জন্যেও এই গাছ চাষ করা হয়। 'কুইন্সল্যান্ড ফ্রুট ফ্লাই' (Bactrocera tryoni) নামক এক প্রকার মাছির আবাস ও আশ্রয় হিসেবে এই গাছের পরিচিতি রয়েছে।অপ্রচলিত এই ফলটি এখন বাংলাদেশে অনেক সহজলভ্য; এর চাষ ও বানিজ্যিক উৎপাদন ধীরে ধীরে বাড়ছে। লুকলুকি বা পাইন্ন্যাগুলা একটি মিষ্টি ও সুস্বাদু দেশীয় ফল। দেখতে আঙুর ফলের মতো। এ ফলে রয়েছে প্রচুর টসটসে রস। তাই স্থানীয় ভাষায় এর নাম ‘পাইন্ন্যাগুলা। পাইন্ন্যাগুলা ফলে রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ আয়রন। সালফার, ফসফেট ছাড়াও ১০ ভাগ রয়েছে ভিটামিন সি। অন্যান্য উপাদানও রয়েছে সমভাবে। আমাদের শরীরের জন্য এই ফলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসুন জেনে নেয়া যাক টিপাফলের গুণ সম্পর্কে। * ওষুধি ফল হিসেবে পাইন্ন্যাগুলার বেশ কদর রয়েছে। এ ফল খেলে হজমশক্তি ও লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। * হৃদরোগীদের জন্য এটি উপকারী ভেষজ ঔষধের কাজ করে। * এই ফলের ভিটামিন সি খাবারের প্রতি রুচি বাড়িয়ে মুখের ক্ষত সারাতে কার্য কর ভূমিকা পালন করে। * এতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। * কারো এসিডিটির সমস্যা থাকলে তা দ্রুত দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। * টিপাফলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামে ভরপুর। শরীরে শক্তি যোগাতে টিপাফলের গুরুত্ব অপরিসীম। * নিয়মিত টিপাফল খেলে শরীরের বিষক্রিয় পদার্থ বের করে দেয়। * এই গাছের পাতা ও ফল ডায়রিয়া রোগের প্রতিরোধক। * শুকনো পাতা ব্রংকাইটিস রোগের জন্য বিশেষ উপকারী। * টিপাফলের শিকড় দাঁতের ব্যাথা নিরাময়ে কাজ করে।  

বাংলাদেশের ফলঃ চুকাই


বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে ফলটি পরিচিত। যেমন: [[রাজশাহী বিভাগ|রাজশাহীতে]] চুকাই, ধামরাই এবং [[মানিকগঞ্জ জেলা|মানিকগঞ্জে]] চুকুল, [[সিলেট জেলা|সিলেটে]] হইলফা, [[কুমিল্লা জেলা|কুমিল্লায়]] মেডশ, মেট্টস বা মেষ্টা ইত্যাদি। এছাড়া চুকুর, চুকুরি, চুপুরি, চুকোর, চুপড়, চুকা, চুক্কি, চুই, মেস্তা, খিইরুপ ইত্যাদি নামও প্রচলিত আছে। এটি ভারতের আসামে টেঙ্গামোরা , কেরালায় লালচাটনি, ইরানে চায়ে-তরশ, আরব দেশগুলোতে কারকাদি, ক্যারিবিয় ও ল্যাটিন আমেরিকায় সরেল, ইন্দোনেশিয়ায় রোসেলা, আফ্রিকার অনেকগুলো দেশে বিসাপ নামে পরিচিত।

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Plantae
বিভাগ: Angiosperms
শ্রেণী: Eudicots
বর্গ: Malvales
পরিবার: Malvaceae
গণ: Hibiscus
প্রজাতি: H. sabdariffa
দ্বিপদী নামHibiscus sabdariffa

ব্যবহার ==
বাংলাদেশে এটি একটি অপ্রচলিত ফল। টক স্বাদের কারণে জ্যাম, জেলি বা আচার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এটি। এছাড়া এদেশে টক বা খাট্টা রান্না করেও খাওয়া হয়। এর মধ্যে 'পেকটিন' আছে বলে শুধুমাত্র চিনি ও চুকাই দিয়ে সহজেই জ্যাম তৈরি করা যায়, আলাদাভাবে [[পেকটিন]] মেশাতে হয় না। অস্ট্রেলিয়া, বার্মা এবং ত্রিনিদাদে এই ফলটি জ্যাম তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এই জ্যাম লালভর্তা নামে পরিচিত। ইংরেজিতে যাকে সরেল জেলি নামে ডাকা হয়।
চুকাই অনেক দেশে সস্তা সবজি হিসেবে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। সম্ভবতঃ এটি মায়ানমারের সবচে জনপ্রিয় সবজি। চুকাই পাতা রসুন কাঁচামরিচ ও চিংড়ি মাছ বা অন্য মাছ সহযোগে ভাজি করে অথবা তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। চুকাই পাতা ও চিংড়ি শুটকি দিয়ে টক বা খাট্টা রান্না করেও খাওয়া হয় এবং এটি মায়ানমারে বেশ জনপ্রিয়।
ইতালি, আফ্রিকা ও থাইল্যান্ডে চুকাই পাতা দিয়ে ভেষজ চা বানিয়ে খাওয়া হয়। ত্রিনিদাদে বিয়ারের সাথে এই চা মিশিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ আছে।
চুকাই বীজে স্নেহ-দ্রবনীয় (lipid soluble) [[এন্টি অক্সিডেন্ট]] আছে, বিশেষতঃ গামা-টোকোফেরল।
চুকাই গাছ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায় বলে ধারনা করা হয়। এই গাছের কান্ড থেকে ভাল মানের আঁশ পাওয়া যায়; তাই অনেক দেশে পাটের বিকল্প হিসেবে চুকাই গাছ চাষ করা হয়।
এক সময় চুকাই গাছ কবিরাজী ওষুধ হিসেবে মূত্রবর্ধক, মৃদু কোষ্ঠ-নরমকারী, হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো।
তবে রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে চুকাই গাছের ক্ষমতা সম্পর্কে যথেষ্ট গবেষণা করা হয়েছে রক্তের চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রনেও এর ভূমিকা প্রমানিত নয়।

বাংলাদেশের ফলঃ কাঠ লিচু



Bangla name: লংগান
English name: Longan
Botanic name: Dimocarpus longan
Family name: Sapindaceae




কাঠলিচু একপ্রকার লিচু জাতীয় সুস্বাদু ফল। এটি লংগান বা আঁশফল নামেও পরিচিত। এর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Dimocarpus longan, যা ক্রান্তীয় অঞ্চলের বৃক্ষ। এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদ্ভিদ।
কাঠলিচু গাছের বর্ণনা:
কাঠলিচু গাছ মধ্যম আকারের চিরসবুজ গাছ যা ৬ থেকে ৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এটি তুষার সহ্য করতে পারে কম। বেলেমাটি এই গাছের জন্য ভাল। শীতল অঞ্চল এর জন্য ভাল নয়; ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে থাকে এমন অঞ্চল এর জন্য উপযুক্ত; তবে স্বল্প সময়ের জন্য তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত নেমে গেলেও এটি তা সহ্য করতে পারে। কাঠলিচু এবং লিচু গাছের ফল ধরার সময় একই।
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) পুষ্টিগত মান
শক্তি ২৫১ কিজু (৬০ kcal)
শর্করা15.14 g
চিনি n/a
খাদ্যে ফাইবার 1.1 g
স্নেহ পদার্থ 0.1 g
প্রোটিন 1.31 g
ভিটামিনসমূহ:
থায়ামিন (বি১) (3%) 0.031 mg
রিবোফ্লাভিন (বি২) (12%) 0.14 mg
ন্যায়েসেন (বি৪) (2%) 0.3 mg
ভিটামিন সি (101%) 84 mg
চিহ্ন ধাতুসমুহ
ক্যালসিয়াম (0%) 1 mg
লোহা (1%) 0.13 mg
ম্যাগনেসিয়াম (3%) 10 mg
ম্যাঙ্গানিজ (2%) 0.052 mg
ফসফরাস (3%) 21 mg
পটাশিয়াম (6%) 266 mg
সোডিয়াম (0%) 0 mg
দস্তা (1%) 0.05 mg

বুধবার, ৮ জুন, ২০১৬

বাংলাদেশের ফলঃ জাম



কালোজাম গ্রীষ্মকালের একটি জনপ্রিয় ফল। জাম বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী। জাম খাওয়াও খুব সহজ কারণ এর খোসা ছারাতে হয়না। এর মিষ্টি রসালো স্বাদ ছোটদের খুব প্রিয়। ত্বক, চুল ও সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্যই উপকারী জাম। জামের কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা জেনে নিই চলুন।

১। ডায়াবেটিসের জন্য ভালো

ঐতিহ্যগতভাবেই জাম ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জামের গ্লিসামিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি ডায়াবেটিসের জন্য ভালো বলে বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। কমপ্লিমেন্ট থার মেড এ প্রকাশিত একটি গবেষণা পর্যালোচনায় জানা যায় যে, জামের ডায়াবেটিক বিরোধী গুণ আছে। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে জামের বীচি রক্তের সুগার লেভেল ৩০% পর্যন্ত কমাতে সাহায্য করে। এই ফলটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

জামে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান যেমন- ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন সি থাকে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে জাম অতুলনীয়ভাবে কাজ করে। এছাড়াও শরীরের হাড়কে শক্তিশালী করতেও সাহায্য করে জাম।

৩। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

জামে এলাজিক এসিড বা এলাজিটেনিন্স, এন্থোসায়ানিন এবং এন্থোসায়ানিডিন্স থাকে যা প্রদাহরোধী হিসেবে কাজ করে। এই উপাদানগুলো শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে বলে কোলেস্টেরলের জারণ রোধ করে এবং হৃদরোগ সৃষ্টিকারী প্লাক গঠনে বাঁধা দেয়। এছাড়াও হাইপারটেনশন প্রতিরোধেও সাহায্য করে জাম। কারণ এতে প্রচুর পটাসিয়াম থাকে। ১০০ গ্রাম জামে ৫৫ গ্রাম পটাসিয়াম থাকে।

৪। ইনফেকশন ভালো করে

ঐতিহ্যগতভাবেই জাম গাছের বাকল, পাতা ও বীজ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে আসছে। ম্যালিক এসিড, গ্যালিক এসিড, অক্সালিক এসিড এবং ট্যানিন থাকে জাম উদ্ভিদে। একারণেই জাম উদ্ভিদ ও এর ফল ম্যালেরিয়া রোধী, ব্যাকটেরিয়ারোধী এবং গ্যাস্ট্রোপ্রোটেক্টিভ হিসেবে কাজ করে।

৫। পরিপাকে সাহায্য করে

আয়ুর্বেদিক ঔষধে জাম পাতা ব্যবহার করা হয় ডায়রিয়া ও আলসার নিরাময়ে। এছাড়াও মুখের স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যার ঔষধ তৈরিতেও ব্যবহার হয় জামপাতা। জাম খেলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়, দাঁত ও মাড়ি শক্ত ও মজবুত করে এবং দাঁতের মাড়ির ক্ষয় রোধে সাহায্য করে।

৬। ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে

বিভিন্ন গবেষণায় জামের কেমোপ্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য প্রমাণিত হয়েছে। জাগেতিয়া জিসি এন্ড কলিগস এর করা এক গবেষণা মতে জানা যায় যে, জাম ফলের নির্যাসে রেডিওপ্রোটেক্টিভ উপাদান আছে। এতে আরো বলা হয় জামের নির্যাস ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র‍্যাডিকেলের কাজে এবং বিকিরণে বাঁধা দেয়।

৭। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি

কালোজাম টিস্যুকে টান টান হতে সাহায্য করে। যা ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত হতে সাহায্য করে। জাম ব্রেইন অ্যালারট হিসেবে কাজ করে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

এছাড়াও জামে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফাইবার থাকে বলে হাইড্রেটেড থাকতে ও ত্বককে স্বাস্থ্যবান করতে সাহায্য করে। ডিটক্সিফায়ার হিসেবেও কাজ করে জাম।

বাংলাদেশের ফলঃ লিচু



বিশ্বের সবচেয়ে সুস্বাদু ফলগুলোর মধ্যে লিচু একটি। গরমের এই সময়ে লিচুর সুমিষ্ট রসালো স্বাদ ছোট বড় সকলেরই পছন্দ। কিন্তু আপনি কি জানেন এই ফলটি আপনার ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্যের জন্য ও অনেক উপকারি? লিচুতে শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানগুলো প্রচুর পরিমাণে থাকে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক লিচুর উপকারিতা গুলো সম্পর্কে।

ত্বকের ক্ষেত্রে লিচুর উপকারিতা :

বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করে

বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করে। লিচু ব্যবহার করে এদের আবির্ভাবকে বাঁধা দেয়া যায়। এজন্য ৪/৫ টি লিচুর খোসা ও বীজ ছাড়িয়ে নিন। এর সাথে একটি কলার একচতুর্থাংশ পরিমাণ নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি আস্তে আস্তে ও বৃত্তাকারে মুখে ও ঘাড়ে ম্যাসাজ করুন। তারপর ১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বয়স বৃদ্ধির মূল কারণ হচ্ছে ফ্রি র‍্যাডিকেলের উপস্থিতি। লিচু অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর থাকে যা ফ্রি র‍্যাডিকেলের সাথে মিশে ত্বকের ক্ষতি রোধ করে।

ত্বকের খুঁত দূর করে

লিচুর রস ত্বকের খুঁত ও দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ৪/৫ টি লিচুর খোসা ও বীজ ছাড়িয়ে নিয়ে ভালো করে পিষে রস বের করে নিন। লিচুর রসে কটল বল চুবিয়ে নিয়ে মুখে লাগান এবং ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানিতে পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে মুখ মুছে নিন। হাইপারপিগমেন্টেশনের জন্যই ত্বকে দাগ হতে দেখা যায়। ভিটামিন সি এর চমৎকার উৎস লিচু। তাই লিচু ত্বকের দাগ দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে।



চুলের ক্ষেত্রে লিচুর উপকারিতা :

চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে লিচু। একটি পাত্রে ৭/৮ লিচুর রসের সাথে ২ টেবিলচামচ অ্যালোভেরা জেল দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন। ১ ঘন্টা পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। লিচুতে কপার থাকে যা হেয়ার ফলিকলকে উদ্দীপিত করে চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

স্বাস্থ্য উপকারিতা :  

ক্যান্সাররোধী

লিচুর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হচ্ছে এর ক্যান্সার বিরোধী প্রভাব আছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে লিচুতে শক্তিশালী অ্যান্টিওক্সিডেন্ট ও ক্যান্সার বিরোধী প্রভাব আছে। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার কোষের এর উপর ভালো প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।

হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারি

লিচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদস্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। লিচুতে অলিগোনল নামক উপাদান থাকে যা  নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদনকে উৎসাহিত করে। নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালীকে প্রসারিত করে বলে রক্ত চলাচল সঠিকভাবে হতে সাহায্য করে। এর ফলে রক্ত পাম্প করতে হার্টের বেশি চাপ প্রয়োগ করতে হয়না। সার্বিক হৃদস্বাস্থ্যের জন্যই লিচু উপকারি।

হজম সহায়ক

লিচু পরিপাক নালীকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। লিচুতে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফাইবার থাকে বলে পরিপাকে সাহায্য করে লিচু। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সাহায্য করে লিচু।

ছানি দূর করে

লিচুতে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে যা অ্যান্টিওক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিনিউপ্লাজমিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। অর্থাৎ এরা কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। এ কারণেই লিচু খেলে ছানি প্রতিরোধ করা যায়।

ওজন কমায়

লিচুতে প্রচুর পানি ও ফাইবার থাকে। এছাড়াও লিচুতে খুব বেশি ক্যালোরি থাকেনা এবং খুব কম ফ্যাট থাকে বলে ওজন কমতে সাহায্য করে।

বাংলাদেশের ফলঃ কাঁঠাল



মালবেরি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত কাঁঠাল জ্যাক অফ অল ফ্রুট নামে পরিচিত। কাঁঠালের বাইরের আবরণটি শক্ত ও কন্টকাবৃত হলেও ভেতরে থাকে হলুদ, সুমিষ্ট ও রসালো কোষ। ক্রান্তীয় বা গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় জলবায়ুতে কাঁঠাল চাষ হয়। সাধারণত দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়াতে পাওয়া যায়। কিন্তু পূর্ব আফ্রিকা ও ব্রাজিলেও পাওয়া যায় কাঁঠাল। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ।

কাঁচা কাঁঠাল রান্না করে খাওয়া হয় এবং এর স্বাদ ভেড়ার মাংসের মত। কাঁঠালের বীজ সিদ্ধ করে বা ভেজে স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়া হয়। পাকা কাঁঠালের কোয়াতে প্রচুর আঁশ থাকে।  সুস্বাদু ও মিষ্টি কাঁঠাল বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। কাঁঠাল ভিটামিন, মিনারেল, ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, কার্বোহাইড্রেট, ইলেক্ট্রোলাইটস, ফাইবার, ফ্যাট ও প্রোটিনে ভরপুর। স্বাস্থ্যকর এই ফলে কোন ফ্যাট থাকেনা কিন্তু উচ্চমাত্রার এনার্জি থাকে। কাঁঠালের স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো সম্পর্কে জেনে নিই চলুন।

১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

কাঁঠাল শক্তিশালী পুষ্টি উপাদান ভিটামিন সি এর চমৎকার উৎস যা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষায় সাহায্য করে। ভিটামিন সি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে শ্বেত রক্ত কণিকার কাজে সহযোগিতা করার মাধ্যমে। এই শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের খুব ভালো একটি পরিমাণ শরীরে সরবরাহ করে এক কাপ কাঁঠাল।

২। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়

ভিটামিন সি এর পাশাপাশি লিগনেন্স, আইসোফ্ল্যাভোনেন্স ও সেপোনিন্স নামক ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট এ সমৃদ্ধ কাঁঠাল। এই ফাইটোনিউট্রিয়েন্টগুলোর মধ্যে ক্যান্সাররোধী ও বয়সরোধী উপাদান আছে। এগুলো  শরীর থেকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র‍্যাডিকেল দূর করতে সাহায্য করে এবং কোষের ক্ষয়কে ধীর গতির করে।

৩। হজমে সহায়তা করে

কাঁঠালে আলসাররোধী উপাদান থাকে বলে হজমের সমস্যা ও আলসার নিরাময়ে সাহায্য করে। উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে বলে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং পেটের বর্জ্য নিষ্কাশনে সাহায্য করে। এই ফাইবার বৃহদান্ত্রের কার্সিনোজেনিক রাসায়নিক  অপসারণ করে কোলনের মিউকাস পর্দাকে সুরক্ষা প্রদান করে।

৪। চোখ এবং ত্বককে স্বাস্থ্যবান রাখে

কাঁঠালে ভিটামিন এ থাকে যা চোখ এবং ত্বককে স্বাস্থ্যবান রাখে। রাতকানা ও মেকুলার ডিজেনারেসন এর মত দৃষ্টিশক্তি সম্পর্কিত সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৫। এনার্জি বৃদ্ধি করে

কাঁঠালকে শক্তি প্রদানকারী খাদ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ কাঁঠালে সুক্রোজ ও ফ্রুক্টোজের মত সাধারণ চিনি উপস্থিত থাকে যা খুব দ্রুত আপনার এনার্জি বৃদ্ধি করবে। কাঁঠালে কোন সম্পৃক্ত চর্বি বা কোলেস্টেরল থাকেনা বলে এটি সুস্বাদু স্বাস্থ্যকর ফল।

৬। উচ্চ রক্তচাপ কমায়

কাঁঠালে পটাসিয়াম থাকে বলে রক্তচাপ কমতে সাহায্য করে এবং এজন্যই হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

৭। অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ করে

কাঁঠালের মূল হাঁপানি রোগীদের উপসর্গ কমতে সাহায্য করে। এর মূল পানিতে ফুটিয়ে নিলে যে নির্যাস তৈরি হয় তা অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ সাহায্য করে।

৮। হাড় শক্ত করে

কাঁঠাল ম্যাগনেসিয়ামে সমৃদ্ধ, এটি এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা ক্যালসিয়ামের শোষণে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি ক্যালসিয়ামের সাথে কাজ করে হাড়কে শক্তিশালী করে ও অষ্টিওপোরোসিস এর মত রোগ প্রতিরোধ করে।

৯। রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে

কাঁঠালে আয়রন থাকে বলে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও শরীরে সঠিকভাবে রক্তসঞ্চালনে সাহায্য করে।

১০। থাইরয়েডকে সুস্থ রাখে

কপার থাইরয়েড মেটাবলিজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিশেষ করে হরমোন তৈরি ও শোষণে। কাঁঠাল এই গুরুত্বপূর্ণ মাইক্রোমিনারেলে ভরপুর।

কাঁঠালের বীজ ঠান্ডা দুধে কয়েক মিনিট ভিজিয়ে রেখে চূর্ণ করে মুখের বলিরেখার উপর দিলে ৬ সপ্তাহের মধ্যে বলিরেখা দূর হবে। ভালো ফল পেতে নিয়মিত ব্যবহার করুন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই নিশ্ছিদ্র ত্বক পেতে চাইলে এই মিশ্রণটির সাথে মধু মিশিয়ে মুখে লাগান এবং শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কাঁঠালের বীচি চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য।    

বাংলাদেশের ফলঃ তাল



তাল সুস্বাদু গ্রীষ্মকালীন ফল। গরমের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো সমাধানে সাহায্য করে তাল। এই উপমহাদেশের অনেক অঞ্চলেরই জনপ্রিয় গাছ তাল গাছ। কারণ এর সব অঙ্গ থেকেই কিছু না কিছু কাজের জিনিস তৈরি হয় যেমন- তাল পাতা দিয়ে হাতপাখা, চাটাই, মাদুর, আঁকবার পট, লেখার পুঁথি, কুন্ডলি, পুতুল  ইত্যাদি তৈরি করা হয়। ঘর ছাওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। এর কান্ড দিয়ে বাড়ি, নৌকা, হাউজ বোট ইত্যাদি তৈরি করা হয়। তালের ফল ও বীজ উভয়েই বাঙালি খাদ্য। তালের ঘন নির্যাস দিয়ে পিঠা তৈরি হয়। তালের বীজ “তালশাঁস” নামে পরিচিত যা গ্রীষ্মকালের জনপ্রিয় খাবার। তাল গাছের কান্ড থেকেও রস সংগ্রহ করা হয় যা থেকে গুঁড়, পাটালি, মিছরি, তাড়ি(এক প্রকার চোলাই মদ)ইত্যাদি তৈরি করা হয়। তাল ফলটি পুষ্টিতে ভরপুর এবং এসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ঘামাচির মত স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।  

তাল ফলটি কেনার সময় নরম তাল কেনা উচিৎ। কারণ বেশি পাকা তাল হজম করতে সমস্যা হয় এবং পাকস্থলীর সমস্যা সৃষ্টি করে। পাকা তালে ভিটামিন এ, বি ও সি থাকে। জিংক, পটাসিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়ামের মত খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ তাল ফল। এছাড়াও এতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান ও থাকে।

আইস আপেল বা তালের স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো হচ্ছে :

১। পেটের সমস্যা দূর করে

পেটের জ্বালাপোড়া দূর করার সবচেয়ে কার্যকরী প্রতিকার হচ্ছে তালের রস। গরমের সময় তৃষ্ণা মেটাতে ও হাইড্রেটেড থাকতে চমৎকার কাজ করে তাল ফল। এসিডিটির সমস্যা দূর করার জন্য তালের রস পান করুন নিয়মিত কয়েকদিন। এছাড়াও হজমের সমস্যা ও পেটের অসুখ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী তাল ফলটি। লেক্সেটিভ বা জোলাপ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। তাল মিছরি ও সবুজ এলাচ ভালো করে গুঁড়ো করে নিন। তালের বীজের উপরের চামড়া ফেলে দিয়ে ছোট ছোট টুকরা করুন। একটি পাত্রে দুধ গরম করে নিন। ফুটন্ত দুধের মধ্যে মিছরি ও এলাচের মিশ্রণটি দিন। যখন মিশ্রণটি একেবারে দ্রবীভূত হয়ে যাবে তখন জ্বাল দেয়া বন্ধ করে দিন। এর মধ্যে কাঁটা তালের শাঁসগুলো দিয়ে দিন এবং ঠান্ডা করুন। এই পানীয়টি ২-৩ দিন ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন। এই পানীয়টি এসিডিটি ও আলসার ভালো করতে দারুন কার্যকরী।    

২। ত্বকের জন্য ভালো

গরমের ঘামাচি থেকে মুক্তি পেতে তাল অনেক ভালো কাজ করে। উপরের পাতলা স্তরটি সরিয়ে নিয়ে তালের শাঁসের ভিতরের রস আক্রান্ত স্থানে লাগালে শীতল অনুভূতি পাবেন এবং ঘামাচির চুলকানি দূর হবে। এছাড়াও চিকেন পক্সের উপসর্গ কমতে ও নিরাময়ে সাহায্য করে তালের শাঁস। অত্যধিক তাপে ত্বকের যে লালভাব হয় তা নিরাময়ে কাজ করে তালের রস। তালের ফেস প্যাক ত্বকের জন্য চমৎকার কাজ করে, এমনকি সেনসিটিভ ত্বকের মানুষদের জন্যও ভালো কাজ করে। শিশুদের ত্বকের সমস্যা দূর করার জন্য এটি ভালো। পুলটিস বা প্রলেপ তৈরি করার জন্য একটি সুতির কাপড় গরম পানিতে দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে জীবাণুমুক্ত করার জন্য। তারপর কপড়টি থেকে পানি চিপে বের করে নিতে হবে এবং ঘরের তাপমাত্রায় ঠান্ডা করতে হবে। এখন তালের উপরের চামড়াটি ফেলে রস বাহির করে নিতে হবে এবং কাপড়টির মধ্যে এই রস লাগাতে হবে। তৈরি হয়ে গেলো পুলটিস। এবার এটি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন।

৩। ব্যথাযুক্ত মূত্রত্যাগ নিরাময়ে সাহায্য করে

গরমের সময় অনেকেই ব্যথাযুক্ত মূত্রত্যাগের সমস্যাটিতে ভুগে থাকেন। ৩টি কচি  তালের রস ও ৩ কাপ ডাবের পানি মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি খুব বেশি মসৃণ করার দরকার নেই, তালের শাঁসের পাতলা টুকরো যেনো থাকে। এর সাথে তাল মিছরি মিশিয়ে নিতে পারেন মিষ্টি করার জন্য। এটি একটি চমৎকার সামার ড্রিংক যা আপনাকে হাইড্রেটেড রাখার পাশাপাশি ইনফেকশন মুক্ত হতেও সাহায্য করবে। হিট স্ট্রোক প্রতিরোধেও সাহায্য করবে এই পানীয়। এটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন। তালের শাঁস ফ্রিজে রেখে দিন এবং গরমের দিনে শিশুরা বাইরে খেলতে যাওয়ার আগে খেতে দিন।  

এছাড়াও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে তাল। যারা ডায়েট করছেন তাদের জন্য একটি ভালো অপশন হচ্ছে তাল। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়েরই অপুষ্টি প্রতিরোধে সাহায্য করে তাল ফল। ত্বকের প্রদাহজনিত রোগ নিরাময়ে কাজ করে। বমি ও বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি ক্রিমিরোগ নিরাময়েও সাহায্য করে। লিভারের টনিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশের ফলঃ বেল


বেল ফলটিকে উড আপেল, বেঙ্গল কুইন্স ও স্টোন আপেলও বলা হয়। বেল গাছ ভারতের স্থানীয় গাছ যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেপাল, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, লাওস, ফিলিপাইন, ফিজি ইত্যাদি দেশে জন্মায়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য বেল গাছ পবিত্রতার প্রতীক। তারা বিশ্বাস করে বেল গাছ ভগবান শিবের আবাস। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে তারা বেল ফল ব্যবহার করে।  পাহাড় ও সমতলভূমি উভয় স্থানেই বেল গাছ জন্মায়।
বেল ফল মসৃণ ও ঘন হয় এবং এর শক্ত ও কাঠের ন্যায় খোলস থাকে। বেল ফল গাছে পাকতে ১১ মাস সময় লাগে। এর আকার হয় বড় জাম্বুরার মত বা এর চেয়েও বড় হতে পারে। বেলের ভেতরের অংশটি হলুদ ও আঁশযুক্ত হয়। তাজা বেলের শরবত মিষ্টি স্বাদের হয়। বেল ফল ঔষধি মানের জন্য সুপরিচিত। এই ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জেনা নিই চলুন।
১। ডায়রিয়া, কলেরা ও অর্শরোগ নিরাময় করে
বেল ফলের মধ্যে ট্যানিন থাকে বলে এটি ডায়রিয়া ও কলেরা নিরাময়ে সাহায্য করে। বেল ফলের শুকনা পাউডার ক্রনিক ডায়রিয়া নিরাময়ে সাহায্য করে। কাঁচা বেলের নির্যাস অর্শ ও ভিটিলিগো রোগ নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। রক্তশূন্যতা এবং কান ও চোখের সমস্যা নিরাময়ে সাহায্য করে। প্রাচীনকালে কাঁচা বেলের পাউডার হলুদ ও ঘি এর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা হত ভাংগা হাড় নিরাময়ের জন্য।
২। গ্যাস্ট্রিক আলসার কমায়
বেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্যাস্ট্রিক আলসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে বিশেষ করে গ্যাস্ট্রোডিউডেনাল আলসার। এই ধরণের আলসার পাকস্থলীর এসিডের ভারসাম্যহীনতার জন্য হয়।
৩। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে
বেল পাতার নির্যাস ভেষজ গুণ সম্পন্ন তাই রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা যায়।
৪। শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সমাধান করতে পারে
অ্যাজমা ও ঠান্ডার মত শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সমাধানে বেলের তেল ব্যবহার করা যায়। গোসলের পূর্বে মাথার তালুতে বেলের তেল লাগালে ঠাণ্ডা প্রতিরোধ করা যায়।
৫। হার্ট ডিজিজ নিরাময়ে সাহায্য করে
বেলের জুস ও ঘি হৃদরোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। হার্ট স্ট্রোক ও অ্যাটাক নিরাময়ে বেল ফল ব্যবহার করা হত।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেল সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক উপাদান। এছাড়াও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে, বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান আছে বিধায় বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
সতর্কতা : পাকা বেল নিয়মিত খাওয়া উচিৎ নয়। কারণ প্রতিদিন পাকা বেল খেলে অন্ত্রের অসাড়তা বা স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপকতা কমে যায় এবং পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে। পাকা বেল একবারে বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিৎ নয়।  

বাংলাদেশের ফলঃ গাব

গাব এমন একটা ফল বাংলা সাহিত্যে যা স্থান পেয়েছে অদ্ভুতভাবে! 'গাবগাছের ভূত' বা 'গাবের আঠার মতো লেগে থাকা'- এমনসব বিষয়ের জন্মদাতা এই ফলটি! যে ফলকে নিয়ে এতকিছু তা কিন্তু খুব একটা সুস্বাদু নয়! আমাদের যে দেশি গাব অর্থাত্‍ Indian Persimmon, তা হালকা মিষ্টি, কষযুক্ত একটি ফল। এটি কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে এবং পাকলে হলদেটে রং ধারণ করে। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অঞ্চলে এই গাব প্রচুর জন্মে। তবে এই গাব খাবার হিসেবে কিন্তু খুব বেশি সমাদর পায়নি। বরং ভেষজ চিকিত্‍সায় ওষুধ হিসেবে এর ব্যবহার বেশি। গাবের আঠা জেলেরা মাছ ধরার জালে লাগায়। এতে জাল মজবুত হয় ও সহজে পচন ধরে না।
আমাদের দেশে আরেক ধরনের গাব পাওয়া যায়। একে বলা হয় বিলাতি গাব। সুগন্ধীযুক্ত গাঢ় লাল এই ফল দেখতে তো আকর্ষণীয় বটেই খেতেও ভীষণ মজা! বিলাতি গাব নামে বিলাতি তো বটেই এর আদি নিবাসও আমাদের দেশের বাইরে! বিলাতি গাবের আদি নিবাস ফিলিপাইনে। কিন্তু এর স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণের কারণে প্রায় সারা বিশ্বেই এর চাষ হয়।
বিলাতি গাবের ইংরেজি নাম Malobo। একে Korean mango বা Velvet-apple নামেও ডাকা হয়। কারণ এটি দেখতে অনেকটা লাল আপেলের মতোই এবং এর গা মখমলের মতো মসৃণ! বিলাতি গাবের বৈজ্ঞানিক নাম Diospyros balncoi। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের চিরসবুজ বৃক্ষ।
আকারে মাঝারি, লম্বায় ১০-৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে গাছে ফুল ফোটে এবং জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়। কাঁচা ফল হালকা সবুজ বা বাদামি হয়। ফল পাকলে উজ্জ্বল বাদামি বা গাঢ় লালবর্ণ ধারণ করে। পাকা ফলের ভেতরটা সাদা এবং মাখনের মতো নরম। পাকা ফল সুগন্ধী এবং বেশ লোভনীয়।
বিলাতি গাব ফল হিসেবে খাবার পাশাপাশি এটা দিয়ে জুস, ডেজার্ট, ফ্রুটকেক, ক্রিম ইত্যাদিও তৈরি করা হয়। এ ফলের পুষ্টিগুণও ব্যাপক। পাকা বিলাতি গাবের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে -
খাদ্যশক্তি- ৫০৪ কিলোক্যালরি
জলীয় অংশ- ৮৩.০-৮৪.৩ গ্রাম
আমিষ- ২.৮ গ্রাম
চর্বি- ০.২ গ্রাম
শর্করা- ১১.৮ গ্রাম
খাদ্যআঁশ- ১.৮ গ্রাম
চিনি- ১১.৪৭ গ্রাম
ক্যালসিয়াম- ৪৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ- ৩৫ আইইউ
ফসফরাস- ১৮ মিলিগ্রাম
আয়রন- ০.৬ মিলিগ্রাম
থায়ামিন- ০.০২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি- ১৮ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম- ১১০ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম- ৩০৩ মিলিগ্রাম
পুষ্টিগুণের পাশাপাশি বিলাতি গাবের রয়েছে আরো অনেক গুণাবলি যা আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। যেমন -
  • ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ, কফ, কাশি ইত্যাদি উপশমে বিলাতি গাব সহায়তা করে।
  • ব্লাড প্রেশার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিলাতি গাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
  • বিলাতি গাব অন্ত্রের বিভিন্ন রোগ এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
  • এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

বাংলাদেশের ফলঃ গোলাপজাম

 



আজকে ভেবেছি একটা অপ্রচলিত ফল নিয়ে কিছু লিখব। ফলটি ছোট বেলায় আমাদের কাছে খুব প্রিয় ছিল। ফলটির নাম গোলাপজাম। আমি হলফ করে বলতে পারি ফলটি অনেকেই চেনেন না। বাংলাদেশ অনেক কিছুতেই সমৃদ্ধ কিন্তু যথাযথঃ মূল্যায়ন হয় না বলে আজ অনেক কিছুই হারাতে বসেছি। গোলামজাম তেমনি একটি ফল। বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায়। 



বাংলা নামঃ গোলাপজাম 
ইংরেজী নামঃ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। Rose Apple নামটি প্রচলিত হলেও অনেক নাম আছে এর। 
বৈজ্ঞানিক নামঃ Syzygium jambos 
পরিবারঃ Myrtaceae 



অন্য যে নামঃ Malabar Plum, Jambu, Chom pu, Chom-phu, Pomme Rosa, Pomme Rose, Pommier Rose, Poma Rosa, Pomarrosa, Manzana Rosa, Manzanita de Rosa, Bodhi Tree. 

ফলটির আদি নিবাস দক্ষিন-পূর্ব এশিয়াও মালায়া। সেখান থেকে ভারতীয় উপমাহাদেশে আসে। এখন বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপিন, চীন, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে দেখা যায়। 



গাছ দীর্ঘদিন বাঁচে (প্রায় ৪০/৫০ বছর) এবং ফল দান করে। গাছ মাঝারী আকৃতির। গাছ লাগানোর ২/৩ বছর পর থেকেই ফল সংগ্রহ করা যায়। 

গোলাপজাম গাছে মাঘ-ফাল্গুন মাসে ফুল আসে এবং জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ মাসের মধ্যে ফল পাকে । গোলাপজামের ফুলও খুবই দৃষ্টিনন্দন । আমরা ছোট বেলায় ফুল নিয়ে অনেক খেলতাম। শুধু তাই নয় ফুলের পাঁপড়িগুলো খেতাম - এগুলো খেতেও ভাল লাগতো। কতটা ঠিক কতটা ঠিক নয় সেটা ভাববার কি সময় পেতাম ওই বয়সে! 



এবার আসি ফলের কথায়। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ বা লালাভ থাকে। পাকতে শুরু করলে ধবধবে সাদা অথবা সাদাটে হলুদ হয় বা শুধুই হলুদ হয়। 



আসুন এই একুশের দিনে-সে দিনে আমরা আমাদের বাঙ্গালী সত্ত্বাকে নতুন করে চিনি প্রতিবছর, এই সময় আপনার ছেলে-মেয়েকে, আপনার নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের একটা সুন্দর ফলের সাথে পরিচিত করে দিন।