বুধবার, ১৫ জুন, ২০১৬

বাংলাদেশের ফলঃ জগডুমুর

জগডুমুর বা যজ্ঞডুমুর গাছের বৈজ্ঞনিক নাম Ficus racemosa বা Ficus glomerata যা Moraceae পরিবারভুক্ত। একে ইংরেজিতে 'Cluster Fig Tree', 'Indian Fig Tree' বা 'Goolar (Gular) Fig' বলা হয়। এর আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মালয়েশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া। এর ফল গাছের কান্ডে থোকায় থোকায় হয়। এটি প্রধানতঃ বন্য পশু পাখির খাদ্য। উত্তর অস্ট্রেলিয়াতে এই গাছ প্রজাপতির খাদ্য হিসেবে লাগানো হয়।




চোরবেকগুলো
বৈজ্ঞানিক নাম: Ficus racemosa
সমনাম: Ficus glomerata Roxb.
বাংলা নাম: যজ্ঞডুমুর, জগডুমুর, যজ্ঞ ডিমারু,   
ইংরেজি নাম: Cluster Fig Tree, Indian Fig Tree.
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য:  Plantae - Plants
বর্গ: Rosales
পরিবারMoraceae
গণ:  Ficus
প্রজাতি:  Ficus racemosa (L.)
পরিচিতি: উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের বৃক্ষ। বট পরিবারের উদ্ভিদ। এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার উদ্ভিদ। এটির ফল রান্না করে এবং পাকার পরে খাওয়া যায়। দেশি রেসাস বানরের এটি প্রধান খাবার। অনেক পাখির পছন্দের খাবার।
এছাড়া আরেক ধরনের ডুমুর বাংলাদেশে পাওয়া যায় যার স্থানীয় চাকমা ভাষায় নাম চোরবেকগুলোফল দেখতে অনেকটা ডুমুর ফলের মত, তবে পাতার মধ্যে বৈসাদৃশ্য রয়েছেডুমুর ফল গাছের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ধরে কিন্তু এই ফল শুধুমাত্র গোড়াতেই ধরেগাছের গোড়ার দিকে লতার মত কিছু শিকড় বের হয় এবং এই শিকড়গুলিতেই থোকায় থোকায় ধরে এই ফলকাঁচা অবস্থায় হালকা সবুজ, কিন্তু পাকলে লাল রঙ ধারকরেপাকলে ফলটি বাকল সুদ্ধ খাওয়া যায় এবং খেতে খুবই মিষ্টি

বিস্তৃতি: যজ্ঞডুমুর সারাদেশে দেখা যায় কিন্তু চোরবেকগুলো শুধু পাহাড়ি অঞ্চলে দেখা যায়

বাংলাদেশের ফলঃ করমচা

করমচা, টক জাতীয় গ্রীষ্মকালীন ফলের নাম। এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্যারিসা ক্যারোন্ডাম। ইংরেজিতে একে Bengal currant বা Christ's thorn বলা হয়। Carissa গণভুক্ত কাঁটাময় গুল্মজাতীয় করমচা উদ্ভিদটি এশিয়া, আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে পাওয়া যায়। কাঁচা ফল সবুজ, পরিণত অবস্থায় যা ম্যাজেন্টা লাল-রং ধারন করে। অত্যন্ত টক স্বাদের এই ফলটি খাওয়া যায়, যদিও এর গাছ বিষাক্ত। করমচার ঝোপ দেখতে সুন্দর। টক স্বাদের ফল করমচা। কাঁটায় ভরা এ গাছটি গ্রাম থেকে এখন শহরেও চাষ হয়। কারও কারও বাড়ির ছাদ কিংবা বারান্দায়ও দেখা মেলে করমচার। করমচা পুষ্টিগুণে যেমন সমৃদ্ধ। কাঁটাযুক্ত গুল্মজাতীয় এ উদ্ভিদটি প্রাকৃতিক ভাবেই জন্মে। তবে এটা চাষও করা সম্ভব। ঝোঁপের মতো বলে গ্রামাঞ্চলে এই গাছ বাড়ির সীমানায় বেড়া হিসেবে লাগানো হয়। তেমনি আছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। প্রতি ১০০ গ্রাম করমচায় আছে শর্করা-১৪ গ্রাম, প্রোটিন-০.৫ গ্রাম, ভিটামিন এ-৪০ আইইউ, ভিটামিন সি- ৩৮ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লেভিন-০.১ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন-০.২ মিলিগ্রাম, আয়রন-১.৩ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম-১৬ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম-২৬০ মিলিগ্রাম, কপার-০.২ মিলিগ্রাম। তবে যাদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি, তাঁদের করমচা না খাওয়াই ভালো। এই মৌসুমে তাজা করমচা খান নিয়মিত, অনেক রোগ এড়ানো যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, বাজারে প্যাকেটে করে চেরির নামে কৃত্রিম রং দেওয়া করমচা বিক্রি হয়। এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। কেনার সময় তাই সতর্ক থাকতে হবে।
 করমচায় চর্বি এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল থাকে না।
 ভিটামিন সি-তে ভরপুর করমচা মুখে রুচি ফিরিয়ে দেয়।
 করমচা রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রেখে হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষা দেয়।
 শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ কমাতেও সাহায্য করে।
 যকৃত ও কিডনির রোগ প্রতিরোধে আছে বিশেষ ভূমিকা।
 মৌসুমি সর্দি-জ্বর, কাশিতে করমচা খান বেশি করে।
 করমচা কখনো কৃমিনাশক হিসেবে ওষুধের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
 এ ছাড়া পেটের নানা অসুখের দাওয়াই করমচা।
 শরীরের ক্লান্তি দূর করে করমচা শরীরকে চাঙা রাখে।
 বাতরোগ কিংবা ব্যথাজনিত জ্বর নিরাময়ে করমচা খুব উপকারী।
 করমচাতে থাকা ভিটামিন এ চোখের জন্য খুবই উপকারী।
 এটি ত্বক ভালো রাখে ও রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
 এতে থাকা ভিটামিন সি দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষা দেয়।

বাংলাদেশের ফলঃ ডেওয়া

Bangla name: ডেওয়া
English name: Lakoocha
Botanic name: Artocarpus lakoocha
Family name: Moraceae

অরুচি ও পেটের বায়ুনাশে ডেউয়া এক অমৃত ফল। পাকলে ডেউয়া মধুর অমস্নরসযুক্ত হয়। কাঁচা ডেউয়া টক, ক্ষুধা দূর করে। পাকা ফল ক্ষুধাবর্ধক হয়। আবার পাকা ডেউয়া পিত্ত ও যকৃতের উপকারী। ডেউয়া বেশি খেলে ক্লীবতা আনে।


     বাংলা নাম ডেলো মাদার, ডেফল, ডেঁওফল, ডেহুয়া, ডেওয়া চাম, বার্তা, দালো ও ডেউয়া। শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট বড় গাছ। পাতা : বড়, গোল, ৬-১২ ইঞ্চি লম্বা ও ৪-৭ ইঞ্চি চওড়া, খসখসে। বৃন্ত : লম্বা। ফুল : দুই রকম_ স্ত্রী ও পুরুষ। ফল : কাঁচা অবস্থায় লালচে, পাকা অবস্থায় পীত রঙ।

পঞ্চবটী বনে থাকে অশ্বত্থ, বট, বেল, অশোক ও আমলকী গাছ। প্রতিটি গাছ উপকারী, গুণেরও শেষ নেই। কিন্তু ওই শাল, পিয়াল, তমাল, কাঁঠাল, আম, চন্দন, চাঁপা, খদির, পলাশ প্রভৃতি গাছের মাঝে ডেউয়া না থাকলে বনের পূর্ণতা পায় না। সমাজে ধোপা, নাপিত, মেথর না থাকলে চলে না, পৃথিবীও অচল হয়ে যাবে। বোটানিক্যাল গার্ডেনে এ জন্য হিজলের পাশে ডুমুর আর ডেউয়ার স্থান থাকা চাই। আম, কাঁঠাল, তাল, জাম, আমলকীর পাশে এ জন্য ডেউয়া বা গাবের স্থান হয়।
ডেউয়ার ভদ্র নাম হলো ডেলো মাদার। পাড়াগাঁয়ে একে বলে ডেউয়া, পাকলে ডেউয়া মধুর অমস্নরসযুক্ত হয়। ডেউয়া শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট বড় গাছ। বড় বড় পাতা। গোল-গোল, ৬-১২ ইঞ্চি লম্বা ও ৪-৭ ইঞ্চি চওড়া হয়। পাতা খসখসে, দেখতে অনেকটা কাকডুমুরের পাতার মতো। কাকডুমুরের পাতা থেকে ডেউয়ার পাতা বড়। পাতার বৃন্ত লম্বা, আধ ইঞ্চি থেকে এক ইঞ্চি লম্বা। ফুল দুই রকম। স্ত্রী ও পুরুষ আলাদা আলাদা।
স্ত্রীফুল আকারে বড়, বোঁটা ছোট ও মসৃণ। কিন্তু ফুলের পাপড়ি নেই, ছোট গুটির আকারে হয়। মঞ্জরিদ-ের ওপর ফুল সাজানো থাকে। স্ত্রী-জাতীয় ফুল থেকেই ফল হয়। ফলের বাইরের আবরণ অসমান এবড়ো-খেবড়ো। ফল কাঁচা অবস্থায় লালচে, পাকলে বাইরের রঙ পীত, কিন্তু ভিতরের শাঁস লাল হয়। কাঁঠালের কোয়ার মতো এবং তার মাঝে বীজও থাকে।
সাধারণত ফাল্গুন মাসে ফুল হয়, আষাঢ়ে পাকতে শুরু করে। পাকলে ডেউয়া মধুর অমস্নরসযুক্ত হয়। কাঁচা ডেউয়া টক, ক্ষুধা দূর করে। পাকা ফল ক্ষুধাবর্ধক হয়। আবার পাকা ডেউয়া পিত্ত ও যকৃতের উপকারী। আবার বেশি খেলে ক্লীবতা আনে। অরুচি ও পেটের বায়ুনাশে ডেউয়া এক অমৃত ফল। ব্রণের দূষিত ক্ষতের পুঁজ বের করে আনার জন্য ডেউয়ার ছালের পুলটিসের ব্যবহার হয়। কাঁচা ডেউয়ার রস এক-দেড় চা-চামচ এক কাপ ঠা-া পানিতে মিশিয়ে কয়েক দিন খেলে অস্বাভাবিক মেদ কমে। তবে মেদ কমাতে গেলে আলু, চিনি বা মিষ্টি খাওয়া না কমালে কিছুতে কিছু হবে না।

বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১৬

বাংলাদেশের ফলঃ বৈচি

‘ আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই...’। বহুলপরিচিত এ ছড়াটি গ্রীষ্মকালে গ্রামে একটু অন্যভাবে শুনলে অবাক হওয়ার কথা নয়। ‘আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা বঁইচি (কাঁটাবহরী) তলায় যাই, বঁইচি মালা গলায় দিয়ে মুখে তুলে খাই।’ শহুরে জীবনে অপরিচিত হলেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি জনপ্রিয় ফল কাঁটাবহরী বা বঁইচি। ছোট গোলাকার ফলের মালা গেঁথে ছোট ছেলেমেয়েরা তা মজা করে খায়।
গ্রামেগঞ্জে সাধারণত খেতের পাশে ঝোপঝাড়ে বঁইচি বেশি জন্মায়। অনেক সময় পাহাড়ের ঢালেও জন্মে। গাছ ঝোপালো এবং গাছের শাখা কাঁটাযুক্ত। এ কারণে বঁইচি কাঁটাবহরী নামেও পরিচিত। বর্তমানে বন উজাড় হওয়ায় গাছটি বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায়।
সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বঁইচিগাছে ফুল ধরে। পাঁচ পাপড়িযুক্ত ক্ষুদ্রাকৃতির ফুল। জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে ফল পাকতে শুরু করে। কাঁচা ফল গোলাকার সবুজ। পাকলে রক্ত বেগুনি রং ধারণ করে। গোলাকার আঙুরের মতো বঁইচি খেতে অম্ল ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত। বৈজ্ঞানিক নাম Slacourtia Indica, পরিবার Slacourtiaceae।
বঁইচিগাছের মূলের রস নিউমোনিয়া এবং পাতার নির্যাস জ্বর, কফ ও ডায়রিয়া নিরাময়ে ব্যবহূত হয়। পাতা ও মূল অনেকে সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করে। বাকলের অংশ তিলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বাতের ব্যথা নিরাময়ে মালিশ তৈরি করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনিয়নের পাটকাঠি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট ছেলেমেয়েরা বঁইচি দিয়ে মালা গেঁথে গলায় জড়িয়ে ফলটি খাচ্ছে। সেখানে কথা হয় শিশু আবীর হোসেনের সঙ্গে। কী খাও—জিজ্ঞেস করতেই বলে ওঠে, ‘কাঁটাবহরী।’ একই কথা জানায় সাবিনা ইয়াসমিন, আবিদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন শিশু।
গ্রামের ফরিদউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, এ সময় ছেলেমেয়েরা জঙ্গল থেকে কাঁটাবহরী তুলে আনে। অনেক সময় বড়রাও তাতে ভাগ বসায়। অতিপরিচিত এ ফলটি খেতে খুব মজার।
বরিশাল নগরের ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় রয়েছে একটি বড় বঁইচিগাছ। সাহিত্যিক ও উদ্ভিদপ্রেমী সাইফুল আহসান ৩০ বছর আগে কুয়াকাটা এলাকা থেকে এনে গাছটি রোপণ করেন। তিনি বলেন, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে বঁইচি ফল নিতে বাড়িতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভিড় জমায়। তবে নগরের অনেকেই জানে না, এটি বঁইচি ফল।
ফলটির ব্যাপারে কথা হয় বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামেগঞ্জে আনাচকানাচে জন্ম নেওয়া বঁইচিগাছের গুণাগুণ সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। তাই বন উজাড়ের সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে বঁইচিগাছ। সুস্বাদু বঁইচি ফলে পুষ্টিগুণ যেমন রয়েছে, তেমনি গাছের পাতা ও মূল নিউমোনিয়া, বাত, জ্বর এবং সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে আয়ুর্বেদশাস্ত্রে বহুল ব্যবহূত হচ্ছে।’ঘাটে গোসল করার অভ্যাস আমার সেই ছোট্টবেলা থেকে। এখনো গ্রামে গেলে ঘাটে গোসল না করলে মনটা ভরে না। ঘাট বলতে ইছামতীর ঘাট। দাদির হাত ধরে যেতাম। শুকনো খালের ভেতর দিয়ে ছিল আমাদের পথ। পথের দু’ধারে খালের গায়ে মাথা উঁচু করে থাকত রাজ্যের যত ঝোপ-ঝাড়। আমাকে শামলাতে দাদিকে একটু ঝক্কিই পোহাতে হত। কারণ ঝোপ-জঙ্গলের প্রতি আমার দুর্নিবার আকর্ষণ। হয়তো না বুঝে সুন্দর কোনো মেঠোফল গালে পুরে দিয়েছি। তার ফল হতো মারাত্মক। কখনো বুনোফলের বিষে নীল হয়ে যেত ঠোঁট-মুখ, কখনো চুলকানির চোটে ফুলে লাল হয়ে যেত অবয়ব। তাই দাদিকে সতর্ক থাকতে হতো। কিন্তু ছোট্ট বাচ্চার ঔসুক্যের সাথে পারা কি চাট্টিখানি কথা! তাই দাদি আমাকে হাত ধরে ধরে বুনো ফল-ফল চেনাতে শুরু করলেন। কোনটার কি দোষ-গুণ সেসবও বাদ রইল না। হঠ্যাৎ এক জৈষ্ঠ্য মাসে আমার হাতে তুলে দিলেন মটর দানার সাইজের ছোট্ট কয়েকটা ফল। আমি না বুঝে তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। তিনি বললেন, ‘খাও!”
‘কী এটা?’ আমার প্রশ্ন।
‘বুঁইচে, খেয়ে দেখো না আগে।’
বৈচি ফলের সেদিনের সেই স্বাদ ২২-২৩ বছরের ব্যবধানে আজও আমার মুখে লেগে আছে। সেদিনের পর থেকে যতদিন নদীতে নিয়মিত গোসল করেছি, নিরন্তর খুঁজে চলেছি ওই ফলটা। বলাই বাহুল্য গত ১০ বছরে বৈঁচি ফলের চেহারা একটি বারের জন্যও দেখিনি।

খয়েরি অশ্বথপাতা--বৈঁচি শেয়ালকাটা আমার দেহ ভালবাসে--জীবনানন্দ দাশ
বৈঁচি বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের একটা। বিলুপ্তপ্রায়ের চেয়েও একটু বেশি। আগেই বলেছি গত ১০ বছরে বৈঁচিফল চোখে দেখিনি। তবে গাছ এখনো কিছু কিছু চোখে পড়ে। সচলরা হয়ত ভাবছেন, গাছ চোখে পড়লে ফল দেখা যায় না কেন? সেকথা যথা সময়ে জানাব। তার আগে এর সম্পর্কে প্রাথমিক আলোচনাটা সেরে ফেলা যাক।
বৈঁচি সারাদেশে পাওয়া যেত কিনা আমার জানা নেই। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খুব বেশি দেখা যেত। বরিশাল অঞ্চলে পাওয়া যেত সেটা ধারণা করছি জীবনানন্দের কবিতা থেকে। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বলে পরিচিত বৃহত্তর যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পক্ষে আমি নিজেই সাক্ষি। আরও একজন সাক্ষি আছেন। বড় মাপের সাক্ষি--বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও আমার মতো সাবেক যশোর জেলার মানুষ। শুধু তাই নয় তৎকালীন যশোর নদীয়াকে বিভক্তকারী ইছামতী তাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে গেছে। আমারটা তো আগেই বলেছি। বিভূতিভূষণ তাঁর পথের পাঁচালী আর ইছামতী উপন্যাসে বেশ কয়েকবার বৈঁচি ঝোপের কথা বলেছেন। শুনেছি আগে পাকা বৈঁচি ফলের মালা গেঁথে ছেলেমেয়েরা সেই মালা থেকে ফল ছিঁড়ে খেতে ভালোবাসত। আমাদের সময় কাউকে মালা গাঁথতে দেখিনি। তবে উইকিপিডিয়াতেও এই তথ্য দেখলাম। তবে আমাদের এলাকার ঝোপ-জঙ্গলের ইতিহাস হিসেবে যেটা আমি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মনে করি সেই ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে বৈঁচিফল সম্পর্কে বিবরণটা তুলে দিলাম--
মাতোর মায়ের বয়স খুব বেশি নয়...স্বামীর মৃত্যুর পর কষ্টে পড়িয়া মলিন শীর্ণ হইয়া পড়িয়াছে। বলিল--কুঠির মাঠে গিয়েছিলাম কুড়ুতি--বুঁইচের মালা নেবা?
দূর্গা তো বাগান খুঁজিয়া নিজেই কত বৈঁচিফল প্রায়ই তুলিয়া আনে, ঘাড় নাড়াইয়া বলিল--সে কিনিবে না।
মাতোর মা বলিল--নেও না দিদি ঠাক্রোন, বেশ মিষ্টি বুঁইচে মধুখালির বিলির ধারের থে--তুলেলাম কোঁচড় হইতে একগাছা মালা বাহির করিয়া বলিল--দেখো কত বড় বড়!

শৈশবের স্মৃতিমাখা ইছামতীর সেই খাল। আজও এখানে কিছু বৈঁচিঝোপ দেখা যায়।
বৈঁচি গাছ সাধরণত ঘণ ঝোপ-জঙ্গলের ভেতরে বেড়ে ওঠে। নদীর পাড়, উঁইঢিবি, বাঁশবন, ফসল ক্ষেতের ঘন বেড়ায় এদের বাস। লোকালয়ে তেমন দেখা যায় না। তবে আগের দিনে অনেকে সখ বাড়িতে লাগাতেন।
বৈঁচিকে অনেকে গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ মনে করে। আসলে এখন কেউ এক বাড়তে দেয় না বার বার ছেঁটে ফেলার কারণে গুল্ম হয়ে পড়ে থাকে। যারা সখ করে বাড়িতে লাগায় সেগুলো রীতিমতো বৃক্ষে পরিণত হয়। তবে বৃদ্ধির অন্যান্য বৃক্ষের তুলনায় খুবই কম। আমার এক নানার বাড়িতে ৫০-৬০ বছরের একটা বৈঁচিগাছ ছিল পাঁচ বছর আগেও। এখন অবশ্য নেই। সেটার উচ্চতা ছিল ৩৫-৪০ ফুট। তবে গাছ যতই বড় হোক এর ঝোপালো ভাবটা ঠিকই থাকে। খুব ঘন ডালপালার কারণে এমন হয়। কাণ্ডের বেড় ৩-৪ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। কাণ্ড ও ডাল বেশ শক্ত।

কাণ্ডের একেবারে গোড়া থেকেই ডাল পালা বের হয়। আবার শেকড় থেকেও নতুন চারা বের হতে পারে।

বৈঁচির প্রতিটা পাতার গোড়ায় একটা বড় কাঁটা থাকে। কাঁটা ৩-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। বৈঁচির কাঁটা মারাত্মক জিনিস। বেশ সুঁচালো আর বিষাক্ত। শরীরের কোথাও বিঁধলে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। একে তো ঘন ডালপালা তার ওপর বিকট দর্শন কাঁটা, সুতরাং বৈঁচির মতো দুর্ভেদ্য আর কোনো মেঠো ঝোপ বাংলাদেশে আছে কিনা সন্দেহ। ভয়ঙ্কর কাঁটার কারণেই এখন বৈঁচি গাছ এখন ছেঁটে ফেলা হয়। আরছাঁটা পড়ে বেশির ভাগই শীতকালে মৌসুমি ফসলের সময়। তাই বৈশাখ মাসে যখন এর ফুল ফুটতে শুরু করবে তখন এতে নতুন ডাল-আর নতুন পাতা থাকে। ফুর ফুটতে অন্তত একবছরের পুরোনো ডাল থাকা চাই।

বৈঁচির পাতা হালকা সবুজ। একপক্ষল। বোঁটা খুব ছোট। পাতা ডিম্বাকৃতির। পাতার দৈর্ঘ্য ১-১.৫ ইঞ্চি। প্রস্থ আধা থেকে পৌনে এক ইঞ্চি। পাতা দেখতে অনেকটা কুরের পাতার মতো। তবে কুলের পাতার চেয়ে বেশ পুরু। কুেেলর পাতা খসখসে বৈঁচির পাতা অনেকটায় মসৃণ। বৈুঁচির খুব ছোট্ট ছোট্ট পাঁচ পাপড়ির ফুল। বছর দশেক দেখা নেই বলে ফুলের প্ঙ্খুানুপুঙ্খ বর্ণণা দিতে পারব না। আগ্রহীরা উইকিপিডিয়াঘেঁটে আসতে পারেন।

এই ছবিটা উইপিডিয়ার
বৈঁচির ফল মটর দানার চেয়ে সামান্য বড়। গোল সবুজ রংয়ের। অনেকটা কুলের মতো দেখতে। ভেতরে শক্ত দ্বিবীজপত্রী একটা করে শক্ত বিঁচি থাকে।

এই ছবিটা উদ্ভিদ জগত থেকে নেয়া 
বৈঁচির কাঁচা ফল হালকা সবুজ রংয়ের। ডাসা ফল হালকা বাদামি আর পাকা ফল জামরংয়ের। অর্থাৎ কালচে বেগুনি রংয়ের।

বৈঁচি বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ। গড়ে ঠিক কত বছর পর্যন্ত বাঁচে বলা মুশকিল। অন্তত আমার জন্য। বৈঁচির বৈজ্ঞানিক নাম Flacourtia indica.

তপ্ত চোখের জলে, পুকুর, উঁইঢিবি, বৈঁচিবন, বাঁশবাগান--সব ঝাপসা হইয়া আসে।
--বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাংলাদেশের ফলঃ টিপাফল

tipafol
 টিপাফল এক ধরনের টক মিষ্টি ফল। এই ফলটি গরমের দিনে হকারদের কাছে পাওয়া যায়। ঢাকার স্কুল কলেজের সামনে পর্যাপ্ত পরিমানে ফলটির দেখা মেলে। এই ফলের অন্যান্য নামগুলো হলো- টিপফল, টিপটিপানি, লুকলুকি, পেলাগোটা, প্যালা, পায়েলা, ঝিটকি, পলাগোটা, টরফই, পানিয়ালা, পানি আমলা, পাইন্না, পাইন্যাগুলা, বেহুই ইত্যাদি। এর ইংরেজি নাম Indian plum বা coffee plum এবং বৈজ্ঞানিক নাম Flacourtia jangomas বা Flacourtia cataphracta. এটি নিচুভূমি এবং পাহাড়ি এলাকার বৃষ্টিবহুল অঞ্চলের 'উইলো' পরিবারভুক্ত বৃক্ষ।এটি ছোট গুল্ম বা বৃক্ষ যা দশ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। গাছ কাঁটাযুক্ত। কাঁটাগুলো শাখান্বিত ও যুথবদ্ধ। ডালপালাতেও কাঁটা থাকে। পাতা একক, ডিম্বাকৃতি, কিছুটা লম্বাটে। অগ্রভাগ সূঁচালো। সবুজ রংয়ের পাতা কিছুটা ঢেউ খেলানো থাকে। পাতার কিনারায় সামান্য খাঁজ কাটা থাকে। গাছে মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে। এর ফুল ছোট, সাদাটে সবুজ থেকে বেগুনী এবং সুগন্ধী। ফুল ফোটে গুচ্ছাকারে। ফল গোলাকার মার্বেলের মতো, খোসা পাতলা ও মসৃণ। কাচা অবস্থায় সবুজ। কাচা ফলও খাওয়া যায়। ফল পাকে জুলাই-আগস্ট মাসে। পাকা ফলের সংরক্ষণ গুণ ভালো। ফল পাকলে লালচে বেগুনী রঙের হয়। পাকা ফলের ভেতরটা বাদামী বা কালচে গোলাপী রঙের। টিপা ফল পাকার পরে টিপে নরম করে খেতে হয়; এই কারনে এমন নামকরন হয়েছে। আচার বা শরবত করেও এটি খাওয়া হয়। এর ছালে ঔষধি গুণ আছে বলেও অনেকে ধারনা করে থাকেন।কাঠের জন্যেও এই গাছ চাষ করা হয়। 'কুইন্সল্যান্ড ফ্রুট ফ্লাই' (Bactrocera tryoni) নামক এক প্রকার মাছির আবাস ও আশ্রয় হিসেবে এই গাছের পরিচিতি রয়েছে।অপ্রচলিত এই ফলটি এখন বাংলাদেশে অনেক সহজলভ্য; এর চাষ ও বানিজ্যিক উৎপাদন ধীরে ধীরে বাড়ছে। লুকলুকি বা পাইন্ন্যাগুলা একটি মিষ্টি ও সুস্বাদু দেশীয় ফল। দেখতে আঙুর ফলের মতো। এ ফলে রয়েছে প্রচুর টসটসে রস। তাই স্থানীয় ভাষায় এর নাম ‘পাইন্ন্যাগুলা। পাইন্ন্যাগুলা ফলে রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ আয়রন। সালফার, ফসফেট ছাড়াও ১০ ভাগ রয়েছে ভিটামিন সি। অন্যান্য উপাদানও রয়েছে সমভাবে। আমাদের শরীরের জন্য এই ফলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসুন জেনে নেয়া যাক টিপাফলের গুণ সম্পর্কে। * ওষুধি ফল হিসেবে পাইন্ন্যাগুলার বেশ কদর রয়েছে। এ ফল খেলে হজমশক্তি ও লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। * হৃদরোগীদের জন্য এটি উপকারী ভেষজ ঔষধের কাজ করে। * এই ফলের ভিটামিন সি খাবারের প্রতি রুচি বাড়িয়ে মুখের ক্ষত সারাতে কার্য কর ভূমিকা পালন করে। * এতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। * কারো এসিডিটির সমস্যা থাকলে তা দ্রুত দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। * টিপাফলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামে ভরপুর। শরীরে শক্তি যোগাতে টিপাফলের গুরুত্ব অপরিসীম। * নিয়মিত টিপাফল খেলে শরীরের বিষক্রিয় পদার্থ বের করে দেয়। * এই গাছের পাতা ও ফল ডায়রিয়া রোগের প্রতিরোধক। * শুকনো পাতা ব্রংকাইটিস রোগের জন্য বিশেষ উপকারী। * টিপাফলের শিকড় দাঁতের ব্যাথা নিরাময়ে কাজ করে।  

বাংলাদেশের ফলঃ চুকাই


বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে ফলটি পরিচিত। যেমন: [[রাজশাহী বিভাগ|রাজশাহীতে]] চুকাই, ধামরাই এবং [[মানিকগঞ্জ জেলা|মানিকগঞ্জে]] চুকুল, [[সিলেট জেলা|সিলেটে]] হইলফা, [[কুমিল্লা জেলা|কুমিল্লায়]] মেডশ, মেট্টস বা মেষ্টা ইত্যাদি। এছাড়া চুকুর, চুকুরি, চুপুরি, চুকোর, চুপড়, চুকা, চুক্কি, চুই, মেস্তা, খিইরুপ ইত্যাদি নামও প্রচলিত আছে। এটি ভারতের আসামে টেঙ্গামোরা , কেরালায় লালচাটনি, ইরানে চায়ে-তরশ, আরব দেশগুলোতে কারকাদি, ক্যারিবিয় ও ল্যাটিন আমেরিকায় সরেল, ইন্দোনেশিয়ায় রোসেলা, আফ্রিকার অনেকগুলো দেশে বিসাপ নামে পরিচিত।

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Plantae
বিভাগ: Angiosperms
শ্রেণী: Eudicots
বর্গ: Malvales
পরিবার: Malvaceae
গণ: Hibiscus
প্রজাতি: H. sabdariffa
দ্বিপদী নামHibiscus sabdariffa

ব্যবহার ==
বাংলাদেশে এটি একটি অপ্রচলিত ফল। টক স্বাদের কারণে জ্যাম, জেলি বা আচার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এটি। এছাড়া এদেশে টক বা খাট্টা রান্না করেও খাওয়া হয়। এর মধ্যে 'পেকটিন' আছে বলে শুধুমাত্র চিনি ও চুকাই দিয়ে সহজেই জ্যাম তৈরি করা যায়, আলাদাভাবে [[পেকটিন]] মেশাতে হয় না। অস্ট্রেলিয়া, বার্মা এবং ত্রিনিদাদে এই ফলটি জ্যাম তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এই জ্যাম লালভর্তা নামে পরিচিত। ইংরেজিতে যাকে সরেল জেলি নামে ডাকা হয়।
চুকাই অনেক দেশে সস্তা সবজি হিসেবে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। সম্ভবতঃ এটি মায়ানমারের সবচে জনপ্রিয় সবজি। চুকাই পাতা রসুন কাঁচামরিচ ও চিংড়ি মাছ বা অন্য মাছ সহযোগে ভাজি করে অথবা তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। চুকাই পাতা ও চিংড়ি শুটকি দিয়ে টক বা খাট্টা রান্না করেও খাওয়া হয় এবং এটি মায়ানমারে বেশ জনপ্রিয়।
ইতালি, আফ্রিকা ও থাইল্যান্ডে চুকাই পাতা দিয়ে ভেষজ চা বানিয়ে খাওয়া হয়। ত্রিনিদাদে বিয়ারের সাথে এই চা মিশিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ আছে।
চুকাই বীজে স্নেহ-দ্রবনীয় (lipid soluble) [[এন্টি অক্সিডেন্ট]] আছে, বিশেষতঃ গামা-টোকোফেরল।
চুকাই গাছ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায় বলে ধারনা করা হয়। এই গাছের কান্ড থেকে ভাল মানের আঁশ পাওয়া যায়; তাই অনেক দেশে পাটের বিকল্প হিসেবে চুকাই গাছ চাষ করা হয়।
এক সময় চুকাই গাছ কবিরাজী ওষুধ হিসেবে মূত্রবর্ধক, মৃদু কোষ্ঠ-নরমকারী, হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো।
তবে রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে চুকাই গাছের ক্ষমতা সম্পর্কে যথেষ্ট গবেষণা করা হয়েছে রক্তের চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রনেও এর ভূমিকা প্রমানিত নয়।

বাংলাদেশের ফলঃ কাঠ লিচু



Bangla name: লংগান
English name: Longan
Botanic name: Dimocarpus longan
Family name: Sapindaceae




কাঠলিচু একপ্রকার লিচু জাতীয় সুস্বাদু ফল। এটি লংগান বা আঁশফল নামেও পরিচিত। এর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Dimocarpus longan, যা ক্রান্তীয় অঞ্চলের বৃক্ষ। এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদ্ভিদ।
কাঠলিচু গাছের বর্ণনা:
কাঠলিচু গাছ মধ্যম আকারের চিরসবুজ গাছ যা ৬ থেকে ৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এটি তুষার সহ্য করতে পারে কম। বেলেমাটি এই গাছের জন্য ভাল। শীতল অঞ্চল এর জন্য ভাল নয়; ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে থাকে এমন অঞ্চল এর জন্য উপযুক্ত; তবে স্বল্প সময়ের জন্য তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত নেমে গেলেও এটি তা সহ্য করতে পারে। কাঠলিচু এবং লিচু গাছের ফল ধরার সময় একই।
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) পুষ্টিগত মান
শক্তি ২৫১ কিজু (৬০ kcal)
শর্করা15.14 g
চিনি n/a
খাদ্যে ফাইবার 1.1 g
স্নেহ পদার্থ 0.1 g
প্রোটিন 1.31 g
ভিটামিনসমূহ:
থায়ামিন (বি১) (3%) 0.031 mg
রিবোফ্লাভিন (বি২) (12%) 0.14 mg
ন্যায়েসেন (বি৪) (2%) 0.3 mg
ভিটামিন সি (101%) 84 mg
চিহ্ন ধাতুসমুহ
ক্যালসিয়াম (0%) 1 mg
লোহা (1%) 0.13 mg
ম্যাগনেসিয়াম (3%) 10 mg
ম্যাঙ্গানিজ (2%) 0.052 mg
ফসফরাস (3%) 21 mg
পটাশিয়াম (6%) 266 mg
সোডিয়াম (0%) 0 mg
দস্তা (1%) 0.05 mg